manob pacharস্টাফ রিপোর্টার: ভিজিল্যান্স টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়েও বন্ধ করতে পারছে না স্টুডেন্ট ভিসায় অবৈধভাবে মানব পাচার। বরং প্রতিদিনই স্টুডেন্ট ভিসায় অবৈধভাবে বাংলাদেশী শ্রমিকরা মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস, মরিশাস, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আর যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ওইসব দেশে অবৈধ হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেশের বিমানবন্দরগুলোয় সতর্কতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে অবৈধভাবে কর্মী গমন রোধ করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে বিষয়টি নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টাস্কফোর্সের কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি দেশের বিমানবন্দরগুলোয় স্থাপিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তাদেরও চিঠি দিয়ে আরো সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ নানা অভিযোগে বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীদের তালিকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। ফেরত আসা কর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোয় তথ্য গোপন করে ফেরত আসা ব্যক্তিরা কাজের সন্ধানে বিদেশে যায়। কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। ধরা পড়ে তাদের অনেকেই জেল খেটেছে। আবার অনেকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত এসেছে। কিন্তু এতে সার্বিকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সবাই।

সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়া, মরিশাস, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের আকর্ষণ করে বেশকিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে বিদেশে মানসম্মত কাজ পাইয়ে দেয়ার চুক্তিতে প্রমিকদের কাছ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো মোটা অংকের টাকা নেয়। ওসব প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্ট ভিসায় যাদের বিদেশে পাঠাচ্ছে তাদের একাংশ শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করতে গেলেও আরেকাংশ প্রচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে বিদেশে যাচ্ছেন কাজ করতে। প্রতিদিন বিমানবন্দর দিয়ে স্টুডেন্ট ও ভিজিট ভিসায় কর্মসংস্থানের খোঁজে অবৈধভাবে বিদেশে যাচ্ছেন অসংখ্য কর্মী। যারা যাচ্ছে তাদের অনেককেই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে। আবার স্টুডেন্ট ভিসায় যারা বিদেশে যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত। উচ্চশিক্ষার যোগ্যতাসূচক সনদ বা বিদেশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফার লেটার বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনেকেরই থাকে না। আবার স্টুডেন্ট বা টুরিস্ট ভিসা নিয়ে যারা মালয়েশিয়া যাচ্ছে, তাদের লাগেজ পরীক্ষা করে আলাদাভাবে মালয়েশিয়ান এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যাম্প ভিসাও পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, গতবছরের জুনে অবৈধভাবে কর্মী পাঠানো ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, স্টুডেন্ট ও ভিজিট ভিসায় বিদেশে যাওয়ার পর ফেরত আসা কর্মীরা একদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাছাড়া এভাবে বিদেশে যাওয়া কর্মীরা নিজেরাও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এ প্রক্রিয়ায় বিদেশে যাওয়া কর্মীরা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরই সংশ্লিষ্ট দেশে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জাবেদ আহমেদ জানান, সম্প্রতি বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণ ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে শ্রমিকদের স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশ গমন রোধ করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।

সাম্প্রতিক