স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম আরো জোরদার করতে তিনটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে যাচ্ছে। ওই ইউনিটগুলোর মধ্যে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে গঠন করা হবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট। স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতির খোঁজ করা ও দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে করা হচ্ছে গোয়েন্দা ইউনিট। আর দুদকের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার ও আসামি ধরার সময় নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে গঠন করা হবে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। ইতিমধ্যে ওই তিনটি বিশেষ ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে দুদকের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালীকরণসহ কতিপয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুর্নীতিবাজদের আদালতে শাস্তি হলেও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত তাদের সম্পদের বিষয়ে কিছু হয় না। এখন থেকে ওই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানানো হবে। দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট আদালতের আদেশ অনুযায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের রিসিভার হওয়া ও ওই সম্পদ রাষ্ট্রীয় খাতে জমা দিতে কাজ করবে। দুর্নীতির দায়ে আদালত যার বিরুদ্ধে শাস্তির রায় দেবেন তার সম্পদ বংশধরদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রীয় খাতে জমা দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, দুদকে বর্তমানে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ বাক্সে জমা পড়ে বা ডাকে আসে সেগুলোই যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাছাড়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্নীতির খবরও আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়। এখন থেকে দুদক কর্মকর্তারা নিজের উদ্যোগে দুর্নীতি খুঁজে বের করে কমিশনে পেশ করবে। পরে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেবে। স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি খুঁজে বের করতেই নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। তাছাড়া দুদকের অ্যানফোর্সমেন্ট ইউনিট গঠন করা হচ্ছে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দিন বা রাতে আসামি ধরার সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে। ওই লক্ষ্যে সরকারের কাছে ৪০ সদস্যের আর্মড ফোর্স চাওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে ওই ইউনিটে দুদকের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হবে। তাছাড়া দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামিদের হেফাজতে রাখতে আগামী কিছুদিনের মধ্যে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় কম্পাউন্ডের ভেতরে নিজস্ব হাজতখানা নির্মাণ করা হবে। ওই হাজতখানার নিরাপত্তায়ও আর্মড ফোর্স মোতায়েন করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, দুদক ১৪টি জেলায় নতুন অফিস চালু, জনবল ও অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করারও উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে ২২টি জেলায় দুদকের অফিস রয়েছে। আরো ১৪টি জেলায় নতুন অফিস চালু করা হলে মোট ৩৬ জেলায় অফিস থাকবে। দুদকে আরো এক হাজার ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দুদকের জনবল এক হাজার ২৬৪ জন। নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হলে মোট জনবল হবে ২ হাজার ২৯০ জন। অতিরিক্ত জনবল পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দও চাওয়া হবে। তাছাড়া দুদকের তথ্যপ্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও জনসংযোগ ইউনিটকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। একই সাথে দুদক আইনের বিধিমালা সংশোধনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট সংশোধনের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
এ প্রসঙ্গে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল জানান, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ কাজ গতিশীল করতে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কমিশন স্বাবলম্বী হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করতে চায়।
< Prev | Next > |
---|