স্টাফ রিপোর্টার: এবার মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টি হয়েছে। পানি পেয়ে বোরো ক্ষেত এখন সবুজের সমাহার। সারাদেশেই বোরোর রোপণ কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। কৃষক এখন ধানের ক্ষেত পরিচর্চায় ব্যস্ত। চলতি মৌসুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে বোরোর আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপণ হয়েছে। আবাদে অগ্রগতির হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। আর চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। তাছাড়া চলতি বছর ৮ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও আবাদ হয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। সেক্ষেত্রে অগ্রগতির হার ৮৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। উফশী বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর হলেও রোপণ হয়েছে ৩৯ দশমিক ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে। সেক্ষেত্রে অগ্রগতির হার ৯৯ দশমিক ১৫ শতাংশ আর স্থানীয় জাতের বোরো আবাদে অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বোরো চাষে পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের ফলে বোরো ক্ষেতে পানির প্রয়োজনে কৃষকের হাহাকার নেই। তাছাড়া এবারের মৌসুমে শুরু ফাগুনেই বৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনুকূল আবহাওয়ায় বোরো ধানের আবাদ কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলছে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা চলতি মৌসুমেও বাম্পার ফলনের আশা করছেন। ইতিমধ্যে অধিকাংশ অঞ্চলে বোরোর রোপণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন এগিয়ে চলছে পরিচর্যার কাজ। চৈত্রমাসের মাঝামাঝি সময়ে দেখা মিলতে পারে ধানের শীষ। বোরো মাঠে এবার পানি অভাব নেই। ফলে দ্রুত পোক্ত হচ্ছে ধানের গোছা। তাছাড়া এবার কৃষির কোনো উপকরণ নিয়েও কৃষককে বেগ পোহাতে হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে বোরোর ফলন কাজ ইতিবাচক।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সারাদেশে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত রোপণ হয়েছে ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে। েেক্ষত্রে অগ্রগতির হার ৯৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। গতবছর ১ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন। এবারও ১ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হলেও দেশের কয়েকটি জেলায় বোরো আবাদের পরিমাণ কমছে। কিশোরগঞ্জ জেলায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবাদ হয় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জেলাটিতে বোরোর আবাদ কমেছে প্রায় ১ হাজার ৪১০ হেক্টর। চলতি মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রাও আগের বছরের সমান। ওই জেলাটিতে শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ হারে বোরোর আবাদ কমছে। তাছাড়া রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলাতেও কমছে বোরা ধানের চাষাবাদ। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা গম, আলু, ভুট্টা ও সবজিসহ বিকল্প চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। তার প্রধান কারণ হচ্ছে সেচ সঙ্কট। ২০১২ সালে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় বোরোর আবাদ হয় ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৪১ হেক্টর জমিতে। পরের বছর ২০১৩ সালে বিভাগটিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ লাখ ৫২ হাজার ১২৮ হেক্টর জমিতে। তার পরের কয়েকটি বছর বিচ্ছিন্নভাবে বোরো আবাদ বাড়লেও সার্বিকভাবে রাজশাহীতে কমেছে বোরো আবাদের পরিমাণ। বর্তমানে জেলাটিতে বোরো চাষ হচ্ছে প্রায় ৬ লাখ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো অবাদের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩ লাখ হেক্টর! ওই অঞ্চলে বোরো আবাদের পরিমাণ কমে যাওয়ার মূল কারণ সেচব্যবস্থা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নতুন করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা যাচ্ছে না। সঙ্কটময় মুহূর্তে ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহারও তেমনভাবে বাড়ছে না।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বোরো আবাদে বছর ভিত্তিতে তারতম্য দেখা গেলেও জাতীয়ভাবে মোট উৎপাদনে তার কোন প্রভাব পড়ছে না। বরং প্রতিবছরই সারাদেশে বোরো আবাদে জমির পরিমাণ বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে উৎপাদনও।
অন্যদিকে এবার দেশের বোরো আবাদ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ মনজুরুল হান্নান জানান, সারা দেশে এখন পর্যন্ত বোরো আবাদের অগ্রগতির হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। কৃষির সমস্ত উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় কোনো প্রকার বোরো ধানের চাষাবাদ বাধা বিঘœ ছাড়াই এগিয়ে চলছে। চলতি বছরও বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। বছরটিতে মৌসুম শেষে দেশের কৃষিতে ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। অর্থাৎ বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
Next > |
---|