নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। এ রায়ের মাধ্যমে অপেক্ষার শেষ হবে নিহতদের পরিবারসহ দেশবাসীর। সবার প্রত্যাশা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেবেন আদালত।
সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন।
র্যাবের ঊর্ধ্বতন সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিচার শুরু হয়। এর আগে লোমহর্ষক সাত খুনের ঘটনায় নিহত দু’জনের পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি আলাদা মামলা হয়েছিল ২০১৪ সালে। দুই মামলার বিচার চলে একসঙ্গে। বিচারক গত ৩০ নভেম্বর চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুনে সোমবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
নিহতদের স্বজনরা বলেছেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে। তারা বলেন, খুনিরা শুধু সাতজন মানুষকে হত্যা করেনি, একই সঙ্গে তারা সাতটি পরিবারের ৭০ সদস্যকেও হত্যা করেছে। সেজন্য খুনের শিকার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকার, তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন, সিরাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহিমের পরিবার খুনিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেন।
তিন বছর আগে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার রায় কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে জেলা জজকোর্টে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। আদালতের বাইরে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
রোববার থেকেই জেলা আদালত চত্বর ও আশপাশের এলাকায় এবং শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখে যানবাহনে তল্লাশি শুরু করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। মামলার আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেয়ার পথকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক।
তিনি বলেন, ৭ খুনের অপহরণস্থল ও নিহতদের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা তথা লিংক রোডের পাশে। তাই এসব এলাকায় যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে পুরো পথে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আদালত চত্বরকেও নিরাপদ রাখতে সাদা পোশাকের পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে এবং অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীও আমাদের সহায়তা করবে।
রায় উপলক্ষে ৭ খুনের শিকার পরিবারগুলোর সঙ্গে শত শত সাধারণ মানুষ আজ আদালত চত্বর ও লিংক রোডে অবস্থান নিতে পারেন। পাশাপাশি মামলার অন্যতম প্রধান আসামি সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনের সমর্থকরাও পাল্টা শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের সমর্থকদের রাস্তায় অবস্থান না নেয়ার জন্য নূর হোসেনের লোকজন চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে খুনের শিকার সাতজনকে অপহরণ করা হয়। ওই রাতেই তাদের হত্যা করে লাশের সঙ্গে ইটের বস্তা বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এর পরদিন ২৮ এপ্রিল নিখোঁজ নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি প্রথম মামলা করেন। ৩০ এপ্রিল বিকালে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে প্রথমে ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পহেলা মে সকালে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৮ মে নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দ্বিতীয় মামলা করেন। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে ১৭ এবং ১৮ মে তিন র্যাব কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লে. কমান্ডার এমএম রানাকে গ্রেফতার করা হয়। ৫ জুন এমএম রানা, ৬ জুন আরিফ হোসেন এবং ১৮ জুন তারেক সাঈদ মোহাম্মদ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেন।
২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়। এতে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ২৩ জন। বাকি ১২ জন পলাতক।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে ২১ জন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১২৭ জনকে। ১০৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এদের মধ্যে ২০ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। আজ মামলার রায় ঘোষণা হবে।
< Prev | Next > |
---|