pm-2-web-prothomস্টাফ রিপোর্টার: পানি নেমে গেলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তিন মাস পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উত্তরাঞ্চলের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে গতকাল শনিবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকালে একথা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সরকার ৩ মাস পর্যন্ত সব ধরনের সহায়তা দেবে। এক কোটি দরিদ্র মানুষকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। আপনাদের ভাগ্যের উন্নয়নে ও পুনর্বাসনে আমি আন্তরিকভাবে সক্রিয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মত আমিও জনগণের জন্য আমার জীবনকে উৎসর্গ করার অঙ্গীকার করেছি। আওয়ামী লীগ দুঃখী মানুষের দল। তাই আপনাদের পাশে বন্ধু হিসেবে, স্বজন হিসেবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বেলা পৌনে ১১টার দিকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের আনুষ্ঠানিকতার সময় কৃষকদের মাঝে আমন ধানের চারাও বিতরণ করেন তিনি। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, বন্যায় যারা বাড়ি-ঘর হারিয়েছে, তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ভূমিহীনদের জমি দেওয়া হবে। দেশের ২১টি জেলার ফসল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রত্যেককে এক বিঘা জমির চারা বিতরণ করা হবে। বীজ, কীটনাশক, সারসহ অন্যান্য উপকরণও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। বন্যায় যেসব কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে তাদের পর্যাপ্ত কৃষি ঋণ দেওয়া হবে। ওইসব এলাকায় কোনো ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদ আদায় করা হবে না। যারা আগে ঋণ নিয়েছিল তাদেরকেও নতুন করে ঋণ দেওয়া হবে।

বন্যা কবলিত এলাকায় কৃষির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনা জামানতে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বর্তমান সরকার সব ধরনের বিপদে মানুষজনের পাশে আছে এবং থাকবে। কিন্তু বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া বন্যার্তদের পাশে না দাঁড়িয়ে আয়েশি জীবনযাপন করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দুর্ভোগ ও কষ্ট লাঘবে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি নানান কর্মসূচি নেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বন্যার পর পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামত ও নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সকল শিক্ষার্থীর বই-খাতা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে তা আবার সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় মানুষ যেন অভুক্ত না থাকে সে জন্য বিদেশ থেকে খাদ্য শস্য আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় কার্যক্রম চালিয়ে আসা বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উপর জুলুম করবেন না। এখন কোনো ধরনের ঋণের কিস্তি আদায়ের চেষ্টা করবেন না। ত্রাণ সামগ্রী ও কৃষকদের মাঝে আমন ধানের চারা বিতরণকালে অন্যান্যের মধ্যে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, গাইবান্ধা-০৪ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বক্তব্য রাখেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ হল রুমে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজ ও বন্যা ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি, সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকার ও গোলাম মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম হিরু, সাধারণ সম্পাদক আবু ব্ক্কর সিদ্দিক বক্তব্য রাখেন। এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়ায় হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এরপর তিনি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরের ঈদগাহ মাঠে বানভাসীদের খোঁজ, ত্রাণ বিতরণ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ধানের চারা বিতরণের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেন। গোবিন্দগঞ্জে মধ্যাহ্ন বিরতির পর বেলা ২টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বন্যা দুর্গত মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে হেলিকপ্টারে করে প্রধানমন্ত্রীর রওনা হন তিনি।

সাম্প্রতিক