pm-picস্টাফ রিপোর্টার: রোহিঙ্গা অনুপ্রেবশ বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস গতকাল বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেখা করতে এলে একথা বলেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাক্ষাতের বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।

প্রেস সচিব বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রেবশ বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানবিক কারণে আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি।

কিন্তু এটা বড় সমস্যা। ইহসানুল করিম বলেন, এই সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে কিনা- সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। গত ২৪ অগাস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ওই রাতের পর থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক নিহতের খবর পাওয়া গেছে; যাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন। আরও সহিংসতার আশঙ্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী ও স্থল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে।

সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ অংশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীদের গুলি করার ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে কয়েক দশকে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। দীর্ঘদিন সেনা শাসিত মিয়ানমারের বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক মানতে নারাজ। গত বছর রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর ফের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ পানে ছুটে। তখনও সীমান্ত বন্ধ রাখলেও মানবিক কারণে অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেওয়া হয়।

প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো দেশেই সন্ত্রাসবাদী কর্মকা- চালাতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা চান সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করতে। যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত দিতে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনায় দেশের গণমাধ্যমের প্রসঙ্গও এসেছে বলে জানান ইহসানুল করিম।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। আগে একটা টেলিভিশন চ্যানেল থাকলেও এখন দেশে ৪৪টি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনে এবং ২৪টি চ্যানেল সম্প্রচারে রয়েছে। পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় ৭৫০। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিডিয়া সরকারের সমালোচনাও করছে। এখানে কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর: উন্নয়নের যে ধারার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে, সে ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার নিজ কার্যালয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে’ অনুদানের চেক গ্রহণের সময় এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ তে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পেরেছি বলেই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত আছে, যার সুফলটা দেশের মানুষ পাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের এটা ধরে রাখতে হবে, এই অগ্রযাত্রাটা, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। এদিন ২৫টি সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি এবং সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়।

অনুদান দেয়া প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যামিডিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিকাশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস, সৎসঙ্গ বাংলাদেশ ইত্যাদি।

অনুদানের প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই দেশটাকে উন্নয়নের জন্য সবরকম প্রচেষ্টাই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের উন্নয়ন নীতিমালার মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ। তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই আমরা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাজেট প্রণয়ন করি এবং তা বাস্তবায়ন করি। সাস্প্রতিক বন্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েই আমাদের বসবাস করতে হবে। আর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের মোকাবেলাও করতে হবে এবং আমরা তা পারি। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।

এই দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। যাদের ফসল নষ্ট হয়েছে তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের আবার ঘরবাড়ি করে দেওয়া থেকে শুরু করে সবরকম সহায়তা করছি। এদেশের কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না, না খেয়ে থাকবে না। বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সাম্প্রতিক