স্টাফ রিপোর্টার: মেরামতের অভাবে দেশের সড়ক-মহাসড়কে খানাখন্দ ও গর্তে ভারপুর। এমন নাজুক অবস্থায় রয়েছে সারাদেশে ৬ হাজার ২০৬ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক। যা দেশজুড়ে মোট সড়ক-মহাসড়কের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। আর শতকরা হিসাবে তার পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তার মধ্যে রয়েছে জাতীয় মহাসড়ক ৭৪৫ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ১ হাজার ২১৩ কিলোমিটার এবং জেলা সড়ক ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার। গত প্রায় এক বছর ওসব সড়কে মেরামতের কাজ হয়নি। জরিপে দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে খুলনা বিভাগের সড়কের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ভাঙাচোরা এসব সড়ক খানাখন্দ ও গর্তে ভরপুর। সওজর মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগ (এইচডিএম) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সওজর অধীনে সারাদেশে ২১ হাজার ৯২ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক থাকলেও ১৬ হাজার ৬২১ কিলোমিটারের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। তার মধ্যে ৬ হাজার ২০৬ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা নাজুক। বাকি সড়কে প্রকল্প চলমান থাকায় এবং কিছু সড়কে জরিপ করা হয়নি। সড়ক নির্মাণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রয়োজন হবে ১২ হাজার ৯০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রতিবছরই সওজ সড়ক-মহাসড়ক সার্ভে করে। আর ওই সার্ভের ভিত্তিতেই সড়কের অবস্থা ও খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট সড়কের ৬২ দশমিক ৬৬ শতাংশের মান ভালো রয়েছে। সেগুলোকে গুড ও ফেয়ার নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ওই সড়কের পরিমাণ ১০ হাজার ৪১৪ কিলোমিটার। তার মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ২ হাজার ৯১২ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ২ হাজার ৭২৭ কিলোমিটার ও জেলা সড়ক ৪ হাজার ৭৭৫ কিলোমিটার। তাছাড়া সওজর অধীনে সারাদেশে জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৭৯০ কিলোমিটার। তবে জরিপ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩ হাজার ৬৫৮ কিলোমিটারের ওপর। তার মধ্যে ১ হাজার ৯৭৭ কিলোমিটার বা ৫৪ শতাংশের অবস্থা ভালো। মোটামুটি অবস্থায় রয়েছে ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং বাকি ২০ দশমিক ২১ শতাংশ মহাসড়কের অবস্থা খারাপ। আর ৪ হাজার ২৪৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের মধ্যে ৩ হাজার ৯৪১ কিলোমিটার জরিপ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪২ দশমিক ৮২ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৬৮৮ কিলোমিটারের অবস্থা ভালো। মোটামুটি অবস্থায় রয়েছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ আঞ্চলিক মহাসড়ক। ভাঙাচোরার হিসেবে জাতীয় মহাসড়কের চেয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। ১ হাজার ২১৩ কিলোমিটার বা ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কের অবস্থা ভাঙাচোরা।
সূত্র জানায়, তুলনামূলকভাবে দেশজুড়ে জেলা সড়কগুলোর অবস্থাই বেশি খারাপ। মোট সড়কের প্রায় অর্ধেক ভাঙাচোরা। সারাদেশে ১৩ হাজার ৯৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে জরিপ করা ৯ হাজার ২২ কিলোমিটারের ওপর। তার মধ্যে জেলা সড়ক ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটারের অবস্থাই খারাপ। আর শতকরা হিসাবে ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ জেলা সড়ক ভালো। বাকি ৪৭ দশমিক ৭ ভাগের অবস্থা খারাপ। তার মধ্যে ৫৭৪ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ১ হাজার ৪৯৪ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ ও ২ হাজার ১৭৮ কিলোমিটার সড়ককে দুর্বল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ভাঙাচোরা সড়ক-মহাসড়কেই গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পানিতে ডুবে থাকা খানাখন্দের কারণে যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ছে। তাতে প্রাণহানিসহ গাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এবং ধীরে গাড়ি চালানোয় ব্যয় ও মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। কোনো কোনো সড়কের অবস্থা এতোই খারাপ যে হেলেদুলে গাড়ি চলে। কাতে গাড়ির আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পানিতে সড়কের অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্ষা শুরুর আগেই সড়ক মেরামত না হলে মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।
সূত্র আরো জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সড়ক সংস্কারে প্রয়োজন ১২ হাজার ৯০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তার মধ্যে সড়ক-মহাসড়কের পিরিয়ডিক মেনটেইন্সেই প্রয়োজন পাঁচ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। আর আংশিক পুনর্র্নিমাণে দরকার ৩ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। তাছাড়া পূর্ণ পুনর্নিমাণে দরকার হবে ৩ হাজার ৩২ কোটি টাকা।
এদিকে সড়কের ভাঙাচোরা অবস্থার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকাকে দায়ি করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান জানান, এইচডিএম রিপোর্ট অনুযায়ী বছরে সড়ক মেরামত খাতে প্রয়োজন ৯ হাজার কোটি টাকা। অথচ ওই খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা চাহিদার ছয় ভাগের এক ভাগ। অপর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকায় যেসব সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা হয়। বাকি রাস্তাগুলোতে রুটিন মেইন্টেন্যান্সের আওতায় মেরামত করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করা হয়। তবে রাস্তায় ছোটখাটো গর্ত বা ভাঙাচোরার কারণে রুটিন মেরামতের মাধ্যমে তড়িঘড়ি কাজ করা হয়। সেখানে উপযুক্ত যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ভারি মেরামতের ক্ষেত্রে কাজে মান বজায় রাখা হয়।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার সড়কের অবস্থা ভালো রয়েছে। আগে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সড়ক খারাপ ছিলো। এবার তা কমে এসেছে। দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর মান খারাপ না। তবে জেলা সড়কগুলোর অবস্থা কিছুটা খারাপ। কারণ হচ্ছে ওসব সড়ক এলজিআরডি, জেলা পরিষদ, ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেগুলোর মান বৃদ্ধি করতে কিছুটা সময় লাগবে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মানুষের খুব একটা ভোগান্তি হবে না। তার আগেই সড়ক মেরামতে সব পদক্ষেপ নেয়া হবে।
< Prev | Next > |
---|