আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার ক্যাসিনোতে হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে দেশটির পুলিশ কর্তৃপক্ষ। শুক্রবারের ওই হামলায় অন্তত ৩৬ জন নিহত হন। সন্দেহভাজন বন্দুকধারী ক্যাসিনোর ভেতর নিজ শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করে বলে পুলিশ জানায়। ম্যানিলার পুলিশ প্রধান অস্কার আলবায়ালদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পুলিশের দৃঢ় বিশ্বাস ওই ব্যক্তি একাই এ হামলা চালিয়েছে।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এক সন্দেহভাজন বন্দুকধারী রিসোর্টস ওয়ার্ল্ড ম্যানিলার এক ক্যাসিনোতে ডাকাতির চেষ্টা করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই হামলাকারী একজন ফিলিপিনো। তার নাম জেসি হাভিয়ের কার্লোস। এই ব্যক্তি জুয়ার টেবিলে অনেক অর্থ খুঁইয়েছেন। এ কারণে তার মাথায় ছিল ঋণের বোঝা। তবে কার্লোসের কোনও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে দাবি পুলিশের। ক্যাসিনোতে হামলার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর কার্লোসের মরদেহ সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। অস্কার আলবায়ালদে আরও জানান, ক্যাসিনোর জুয়ার টেবিলে হেরে যাওয়া বিশাল ঋণের বোঝা তার মাথায় ছিল বলে কার্লোসের পরিবার জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, কার্লোস ক্যাসিনো থেকে লুটের জন্য প্রায় ২৩ লাখ ডলার সমমূল্যের চিপস কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে নিয়েছিলেন। পরে তিনি অন্য এক রুমে গিয়ে একটি মোটা কম্বল শরীরে জড়িয়ে তাতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন বলে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় পুলিশের প্রধান রোনাল্ড ডেলা রোজা গত শুক্রবার জানিয়েছিলেন।
ক্যাসিনোতে আটকে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ম্যানিলার পুলিশ প্রধান অস্কার আলবায়ালদে। তাদের মধ্যে ওই সন্দেহভাজন ছাড়াও ১৩ জন ক্যাসিনো কর্মী এবং ২২ জন অতিথি রয়েছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন। তারা ক্যাসিনোর তৃতীয় তলায় আটকা পড়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহের শরীরে কোনও গুলি পাওয়া যায়নি। তারা দম বন্ধ হয়ে মারা যান বলে পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এদিকে, এক বিবৃতিতে ক্যাসিনোর মালিক রিসোর্টস ওয়ার্ল্ড ম্যানিলা জানিয়েছে, ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন বন্দুকধারী ছাড়া ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫৪ জন। তারা মর্মান্তিক এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এ ঘটনাকে জঙ্গি হামলা বলে মনে করছেন না ফিলিপাইনের পুলিশ ও প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুয়ার্তের মুখপাত্র আর্নেস্তো আবেল্লা গত শুক্রবার বলেছিলেন, ‘সব তথ্য সেদিকেই নির্দেশ করছে যে, মানসিকভাবে বিশৃঙ্খল কোনও ব্যক্তি এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সন্দেহভাজন ব্যক্তি সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছিল। যার মানে, কাউকে হতাহত করতে চাননি তিনি।’ তখন ডেলা রোজা ডিজেডএমএম রেডিওকে বলেন, ‘আমরা এর সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনও সম্পর্ক দেখছি না। বরং আমরা এতে ডাকাতির বিষয়টিই দেখতে পাচ্ছি। জঙ্গি হামলা হলে ওই ব্যক্তি ক্যাসিনোতে থাকা মানুষদের ওপর হামলা চালাতো। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং তিনি ফাঁকা গুলি চালিয়েছেন।’ দেশটির পুলিশ প্রধান সতর্ক করেছিলেন, ‘এখন হয়ত আতঙ্ক ছড়াতে এ ঘটনাকেও জঙ্গিরা তাদের হামলা উল্লেখ করে তার দায় স্বীকার করতে পারে।’
উল্লেখ্য, জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও প্রদেশে বর্তমানে জরুরি অবস্থা জারি করে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুয়ার্তে।
< Prev | Next > |
---|