স্পোর্টস ডেস্ক : ওয়ানডের মত টোয়েন্টি টোয়েন্টি সিরিজেও নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে কিউইদের কাছে ২৭ রানে হেরেছে টাইগাররা। ফলে ওয়ানডের মত তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে নিলো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ষষ্ঠবারের মত টি২০ ফরম্যাটে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে নেমে এই প্রথমবারের মত কোন প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করলো কিউইরা। আর নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে নেমে প্রথমবারের মত হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
ম্যাচ ভাগ্য না থাকলেও টস ভাগ্য চলছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির। শেষ দুই ওয়ানডের পর প্রথম দুই টি২০তেও জয় পান তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচেও টস ভাগ্যে জিতলেন ম্যাশ। সফরে শেষবারের মত টস ভাগ্যে জিতে প্রথম ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত টাইগার দলপতির।
তাই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের উদ্বোধন করেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও জেমস নিশাম। ওভার প্রতি ৭-এর উপর রেখে শুরুটা ভালোই করেছিলেন তারা। তবে উদ্বোধনী জুটিতে উইলিয়ামসন ও নিশামকে ৩৪ রানের বেশি যোগ করতে দেননি তৃতীয় বোলার হিসেবে আক্রমনে আসা বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেন। ১২ বলে ১৫ রান করে ফিরেন নিশাম।
নিশামকে ফেরানোর চার বল পরই আবারো উইকেট তুলে নেন রুবেল। তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নামা আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ার কলিন মুনরোকে শুন্য হাতে ফিরিয়ে দেন রুবেল। এক ওভারে রুবেলের দুই উইকেট শিকারে, উজ্জীবিত দল।
তাই দলীয় ৪১ রানে নিউজিল্যান্ডের আরও একজন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে ম্যাচের লাগাম নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। চার নম্বরে নামা টম ব্রসকে ৫ রানে থামিয়ে দেন স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন।
চাপে পড়া নিউজিল্যান্ড, এরপর চাপ সামলিয়েছে উইলিয়ামসন ও কোরি এন্ডারসনের সর্তক ব্যাটিং-এ। উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ১০ম ওভার শেষে রানের গতি বাড়িয়েছেন উইলিয়ামসন-এন্ডারসন। ১০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিলো ৩ উইকেটে ৫৫ রান। আর ১৮ ওভার শেষে কিউইদের রান গিয়ে পৌছায় ৩ উইকেটে ১৬৫ রানে। অর্থাৎ পরের ৮ ওভারে ১১০ রান যোগ করেন উইলিয়ামসন-এন্ডারসন। অবশ্য নিউজিল্যান্ডের দলীয় ১০৭ রানেই থেমে যেতে পারতো এই জুটি। যদি না মাশরাফির বলে উইলিয়ামসনের ক্যাচ না ফেলতেন সাকিব। বন্ধু সাকিবের মত দলীয় ১৫০ রানে ক্যাচ ফেলেছেন তামিমও। ফলে এবারও ভাগ্যবান উইলিয়ামসন, দুভার্গ্য মাশরাফির।
শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারের প্রথম বলে রুবেলের তৃতীয় শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন উইলিয়ামসন। ততক্ষনে রানের পাহাড়ে বসার পথ তৈরি করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। এন্ডারসনের সাথে ৭২ বলে ১২৪ রানের জুটি গড়ে নিজের নামের পাশে ৬০ রান রাখতে পেরেছেন উইলিয়ামসন। তার ৫৭ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো।
উইলিয়ামসন যেখানে খেলেছেন ওয়ানডে স্টাইলে, সেখানে এন্ডারসন ছিলেন বিধ্বংসী রুপে। তাই মাত্র ৪১ বলে ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ইনিংসে ২টি চার ও ১০টি বিশাল ছক্কার মার ছিলো। এতে করে ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১৯৪ রানে গিয়ে পৌছায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। বাংলাদেশের রুবেল ৩টি ও মোসাদ্দেক হোসেন ১টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৯৫ রানের টার্গেটটা স্পর্শ করতে যেভাবে শুরুর দরকার ছিলো, ঠিক তাই করেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ফিল্ডিংয়ের সময় ইনজুরিতে পড়ায় ইনিংস শুরু করতে নামেননি ইমরুল। তাই তামিম-সৌম্যর শুরুটা ছিলো চমৎকার। ৪ ওভারেই দলের স্কোর তামিম-সৌম্য নিয়ে যান ৩৭ রানে। এসময় দু’জনই বাউন্ডারি মারেন সমান তিনটি করে। দু’জনের স্কোরও ছিলো গা ঘেষে। তামিম ১৮ ও সৌম্য ১৭। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে তামিমকে ছুড়ে ফেলেন সৌম্য। কিন্তু ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেট ছেড়ে নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্টকে ছক্কা হাকান তামিম। কিন্তু চতুর্থ বলেই নিজের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান তামিম। এতে ১৫ বলে ২৪ রানে বিদায় নেন তিনি।
তামিম বিদায় নিলেও, রানের চাকা দ্রুত গতিতেই ঘুড়ছিলো সৌম্য ও সাব্বিরের কল্যাণে। উইকেটের চারপাশ থেকেই অবলীলায় রান তুলছিলেন তারা। ফলে ৮ ওভারেই ৮০ রানে পৌছায় বাংলাদেশ। তবে জমে যাওয়া জুটিটি ৮২ রানেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সৌম্যর ভুলে। নিউজিল্যান্ডের স্পিনার ইশ সোদিকে ছক্কা মারতে গিয়ে তার হাতেই ক্যাচ দেন সৌম্য। ফলে সাব্বিরের সাথে ২২ বলে ৩৮ রানের জুটি থেমে যায়। আর ৬টি চারে ২৮ বলে ৪২ রান করে থামেন সৌম্য।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর বাংলাদেশের ইনিংসের হাল শক্ত হাতে ধরতে পারেননি পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। বড় কোন জুটি বা দ্রুত গতিতে রান তোলার কাজটাও সঠিকভাবে করতে পারেননি তারা। ফলে তামিম ও সৌম্যর দেখানো পথে যেতে না পারায় ৬ উইকেটে ১৬৭ রান পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। সাব্বিরের ১৬ বলে ১৮, সাকিবের ৩৪ বলে ৪১, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১৪ বলে ১৮, মোসাদ্দেকের ৭ বলে ১২ রান বাংলাদেশের জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিলো না। তাই ম্যাচ হেরে সফরে দ্বিতীয় হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেতে হয় বাংলাদেশকে। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন বোল্ট ও সোদি। ম্যাচের সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের কোরি এন্ডারসন।
ওয়েলিংটনে আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।
স্কোরবোর্ড :
নিউজিল্যান্ড :
কেন উইলিয়ামসন ব রুবেল ৬০
জেমস নিশাম এলবিডব্লিউ ব রুবেল ১৫
কলিন মুনরো ক সৌম্য ব রুবেল ০
টম ব্রুস ব ইমরুল ব মোসাদ্দেক ৫
কোরি এন্ডারসন অপরাজিত ৯৪
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম অপরাজিত ৪
অতিরিক্ত (লে বা-১৪, ও-২) ১৬
মোট (৪ উইকেট, ২০ ওভার) ১৯৪
উইকেট পতন : ১/৩৪ (নিশাম), ২/৩৬ (মুনরো), ৩/৪১ (ব্রুস), ৪/১৬৫ (উইলিয়ামসন)।
বোলিং : মাশরাফি ৩.২-০-৪২-০, তাসকিন ৪-০-৩৭-০ (ও-২), রুবেল ৪-০-৩১-৩, সাকিব ৪-০-২২-০,
মোসাদ্দেক ৩.৪-০-২৭-১, সৌম্য ১-০-২১-০।
বাংলাদেশ
তামিম ইকবাল ক গ্র্যান্ডহোম ব বোল্ট ২৪
সৌম্য সরকার ক এন্ড ব সোদি ৪২
সাব্বির রহমান বোল্ড ব উইলিয়ামসন ১৮
সাকিব আল হাসান ক এন্ডারসন ব বোল্ট ৪১
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বোল্ড ব সোদি ১৮
মোসাদ্দেক হোসেন ক গ্র্যান্ডহোম ব স্যান্টনার ১২
নুরুল হাসান অপরাজিত ৭
রুবেল হোসেন অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-১, ও-৩) ৪
মোট (৬ উইকেট, ২০ ওভার) ১৬৭
উইকেট পতন : ১/৪৪ (তামিম), ২/৮২ (সৌম্য), ৩/৯৭ (সাব্বির), ৪/১২২ (মাহমুদুল্লাহ), ৫/১৫০ (মোসাদ্দেক), ৬/১৬১ (সাকিব)।
বোলিং : স্যান্টনার : ৪-০-৩৭-১ (ও-২), ওয়েলার ৪-০-২৯-০, বোল্ট ৪-০-৪৮-২, নিশাম ১-০-১৭-০, সোদি ৪-০-২২-২ (ও-১), গ্র্যান্ডহোম ১-০-৪-০ (ও-১), উইলিয়ামসন ২-০-৯-১।
ফল : নিউজিল্যান্ড ২৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : কোরি এন্ডারসন (নিউজিল্যান্ড)
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলো নিউজিল্যান্ড
Next > |
---|