স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে আদালতগুলোতে হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন। এজলাস সংকটের কারণে বিচারকদের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
২০০৭ সালের ১ নভেম্বর উচ্চ আদালতের একটি রায় অনুযায়ী দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের পৃথকভাবে পথচলা শুরু হয়। শুরুতেই আদালতগুলোতে বিশেষ করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এজলাসের অপ্রতুলতা দেখা দেয়। ফলে বিচারকরা এজলাস ভাগাভাগি করে বিচারিক কাজ চালাতে থাকেন। কিন্তু তাতে করে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণ যেমন ভোগান্তির শিকার হতে থাকেন, তেমনি মামলার জট দিনের পর দিন বাড়তে থাকে।
এ সমস্যা সমাধানে দেশের সব জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ২০ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে, বিচারকাজে এসব ভবন ব্যবহার করা হচ্ছে। চলতি বছর ডিসেম্বরে ১০টি জেলায় ভবন নির্মাণ শেষ হবে। আর ৮ জেলায় শেষ হবে আগামী বছরের জুন মাস নাগাদ।
সূত্রমতে, ২২ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি জেলার জেলা জজ আদালত ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজও চলছে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বিভিন্ন জেলায় আইনজীবী সমিতির ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজও চলছে। যে ২০ জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে সেগুলো হলো- হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, র্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, সিলেট, মৌলভীবাজার. বগুড়া, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, যশোর ও রংপুর।
আগামী ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে ১০ জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের কাজ। এগুলো হলো নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, দিনাজপুর, ফরিদপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, পঞ্চগড়, পাবনা ও মাগুরা। আরো আট জেলা ঢাকা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ ও ভোলায় আগামি বছরের জুনের মধ্যে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
ভূমিসংক্রান্ত জটিলতায় চার জেলায়-রাঙামাটি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও নেত্রকোনা জেলায় এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে, আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আইন মন্ত্রণালয় বেশ কিছু সংস্কারকাজেও হাত দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আইন ও বিচার বিভাগের আওতায় ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প।
এগুলো হলো দেশের ৬৪টি জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (১ম পর্যায়) ২য় সংশোধিত প্রকল্প, ২৮টি জেলায় আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ জেলা জজ আদালত ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প, সরকারি আইনি সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান, অধস্তন আদালত ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে আইন ও বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, জাস্টিস রিফর্ম অ্যান্ড করাপশন প্রিভেনশন প্রকল্প এবং জাস্টিস সেক্টর ফ্যাসিলিটিজ প্রকল্প।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮টি জেলায় আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ জেলা জজ আদালত ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৭টি জেলায় জেলা জজ আদালত ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫টি জেলায় আদালত ভবন সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, অবশিষ্ট দুটি জেলা জজ আদালত ভবনের কাজও ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। জেলা ও উপজেলা আইনজীবী সমিতির ভবন নির্মাণ ও গ্রন্থাগারে আইনের বই কিনতে এ পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয় প্রায় ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা আইনজীবী সমিতির ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, হবিগঞ্জসহ বেশ কয়েক জেলা আইনজীবী সমিতির বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।
এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে চলার ব্যবস্থা করে দিতে অবকাঠামো তৈরি, গাড়ি সুবিধা, বিচারকদের উপযুক্ত বেতন-ভাতা, সামাজিক মর্যাদা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ, নিয়োগ ও সময়মতো পদোন্নতি, নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে পদক্ষেপ নেন। আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির স্থান সংকুলানের জন্য তিনি দেশের ৬৪টি জেলায় একটি করে সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। এর প্রথম পর্যায়ে দুই হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২টি জেলায় সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণ চলছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে ২০টি আদালত ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
Next > |
---|