স্টাফ রিপোর্টার: গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে রেখে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল নিষ্পত্তি করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ গতকাল বুধবার পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেয়। আদালতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। বিসিবির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ; আর রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিসিবির গঠনতন্ত্র নিয়ে যে মামলা চলছিল সেটি আপিল বিভাগ নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। আদালত নির্দেশনা দিয়েছে, ইচ্ছে করলে বিসিবি তাদের গঠনতন্ত্র নিজেরাই সংশোধন করতে পারবে। তবে তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রেখে বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে তা করতে হবে, যেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ এবং সব ধরনের ক্রিকটাররা এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। মাহবুবে আলম আদালতের পর্যবেক্ষণ উদ্বৃত করে বলেন, দেশের ক্রিড়াঙ্গনকে বিশেষ করে ক্রিকেটকে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য বিসিবি এবং এনএসসিকে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করতে বলেছে আদালত। রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক সাংবাদিকদের বলেন, আপিল নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ বলেছেন, গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা বিসিবির হাতেই থাকবে। এনএসসি গঠনতন্ত্র (বিসিবি) সংশোধন করে দিতে পারবে না।
এতে বিসিবি আরও স্বায়ত্বশাসিত হবে, সংঘবদ্ধ হবে, শক্তিশালী হবে। ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বোর্ড দুটিই শক্তিশালী হবে। ভবিষ্যতে ক্রিকেটের উন্নতি হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। এর জন্য বিসিবি এবং বাংলাদেশকে এখনই প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। এ জন্যই বিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। গঠনতন্ত্রে কোনো সংযোজন-বিয়োজন করতে হলে সেটা করবে কেবল বিসিবি। অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ২০১২ সালের নভেম্বরে বিসিবির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে বোর্ডকে একটি চিঠি দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ওই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হাই কোর্টে আবেদন করেন বিসিবির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ইউসুফ জামিল বাবু এবং বিসিবির সাবেক কাউন্সিলর স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন চৌধুরী। ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে বিসিবিকে দেওয়া এনএসসির চিঠি তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে চিঠি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালত বিসিবির গঠনতন্ত্রে আনা এনএসসির সংশোধনীকে অকার্যকর ঘোষণা করে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আবদুর ওই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাদের অধিভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে পারবে না। তাই আদালত বিসিবির গঠনতন্ত্রের সংশোধনীকে অকার্যকর এবং বাধ্যতামূলক নয় বলে রায় দিচ্ছে। পরে হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে এনএসসি ও বিসিবি। চেম্বার বিচারপতি হাই কোর্টের রায় স্থগিত করে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। একইসঙ্গে এনএসসি ও বিসিবিকে লিভ টু আপিল করতে বলেন। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই আদালত তাদের আপিলের অনুমতি দেয়। সেই আপিলই গতকাল বুধবার নিষ্পত্তি করে রায় দিল সর্বোচ্চ আদালত।
< Prev | Next > |
---|