ঢাকা : বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিল শুনানিতে ১২ সিনিয়র আইনজীবীকে এমিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এমিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আইনজীবীরা হলেন- প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকোনুদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট এমআই ফারুকি, অ্যাডভোকেট টিএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। এই ১২ আইনজীবী এই মামলায় আইনি মতামত দিয়ে আদালতকে সহায়তা করবেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন। এদিকে আপিল শুনানির প্রস্তুতির জন্য ২ মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ৭ই মার্চ শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দেয়। এই সময়ের মধ্যে মামলার উভয় পক্ষকে লিখিত জবাব দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত।
এর আগে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের দেয়া এক রায়ে বিচারক অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এই সংশোধনীকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থী বলে অভিহিত করা হয়েছে। রায়ে সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ওই অনুচ্ছেদের কারণে দলের সংসদ সদস্যরা হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। রায়ে আরো বলা হয়, বিভিন্ন উন্নত দেশে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে আমাদের দেশের সংসদ সদস্যদের দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের বাইরে যেতে পারেন না। রায়ে বলা হয়, এই সংশোধনী রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করবে। এটি বহাল থাকলে বিচারপতিদের সংসদ সদস্যদের করুণাপ্রার্থী হয়ে থাকতে হবে। যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এই রায় ও অভিমত দেন। বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক মো. আশরাফুল কামাল অপর দুই বিচারপতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। কিন্তু তার দ্বিমতের অংশ প্রকাশ্য আদালতে জানানো হয়নি। এই রায়ের ফলে সংসদের হাতে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা বাতিল হয়ে গেলো।
< Prev | Next > |
---|