স্টাফ রিপোর্টার: চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের দুই সপ্তাহে প্রায় ২২ লাখ ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে নতুন ভোটার হবেন প্রায় ১৫ লাখ; যাদের নাম তালিকায় যুক্ত হবে। মারা যাওয়ায় প্রায় সাত লাখ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। গত ২৫ জুলাই থেকে দেশজুড়ে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি, মৃতদের বাদ দেওয়া ও ভোটারের ঠিকানা স্থানান্তরের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের এই কাজ গতকাল বুধবার শেষ হচ্ছে। এ সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত হালনাগাদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়- ঢাকা অঞ্চলেই নতুন ভোটার যুক্ত হচ্ছে বেশি। উল্টোচিত্র দেখা গেছে বরিশাল অঞ্চলে; সেখানে নতুনদের অন্তর্ভুক্তি যেমন কম, তেমনি মৃত ভোটারও কম রয়েছে। নতুন ভোটার হতে নিবন্ধন ফরম পূরণ করেছেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭১১ জন। ঢাকা অঞ্চলে সবেচেয়ে বেশি ২ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৩ জন ফরম পূরণ করেছেন।
বরিশাল অঞ্চলে সবচেয়ে কম ৫৭ হাজার ২৫৮ জন নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন, রাজশাহীতে ১ লাখ ৪৬ হাজার ১১২ জন, খুলনায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬১ জন, সিলেটে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৯৫ জন, রংপুরে ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৪ জন, ময়মনসিংহে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৫৮ জন, ফরিদপুরে ৮৪ হাজার ৫৩৯ জন এবং কুমিল্লা অঞ্চলে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩০ জন নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত ভোটারের তথ্য মিলেছে সবচেয়ে বেশি রাজশাহী অঞ্চলে, ১ লাখ ৯ হাজার ৯১০ জন; আর সবচেয়ে কম বরিশাল অঞ্চলে ৩২ হাজার ৩৩২ জন। এ ছাড়া ঢাকা অঞ্চলে ৬৪ হাজার ৪৬৩ জন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৩২ হাজার ৫১২ জন, খুলনা অঞ্চলে ৮০ হাজার ৪৬৪ জন, সিলেট অঞ্চলে ৬৭ হাজার ৪৬৩ জন, রংপুর অঞ্চলে ৮২ হাজার ১৬৬ জন, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ১ লাখ ৬ হাজার ৯৬৫ জন, ফরিদপুর অঞ্চলে ৪০ হাজার ৮৪৯ জন ও কুমিল্লা অঞ্চলে ৭৭ হাজার ৮২৪ জন মৃত ভোটারের তথ্য নেওয়া হয়েছে। ঠিকানা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন মোট ৩৬ হাজার ৩৪১ জন নাগরিক। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হচ্ছে, তাদের ভোটার করা হচ্ছে এ হালনাগাদে। নির্বাচন কমিশন ২০১৫ সালের হালনাগাদে ১৫ বছর বয়সীদেরও তথ্য সংগ্রহ করেছিল; যারা ২০১৮ সালে ভোটার হওয়া যোগ্য হচ্ছেন। তাদের নাম এ তালিকায় যুক্ত হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। ২০১৭ ও ২০১৫ সালের তথ্য নিয়ে এবার অন্তত ২৫ লাখ নাম যোগ হবে ভোটার তালিকায়। আর সাত লাখ মৃত ভোটারের নাম বিদ্যমান তালিকা থেকে বাদ যাবে।
ইসির সহকারী সচিব মো. মোশারফ হোসেন জানান, মাঠ পর্যায় থেকে ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে ভোটারদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। গতকাল বুধবার তথ্য সংগ্রহের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর সারা দেশের একীভূত তথ্য জানানো সম্ভব হবে। ২০ আগস্ট থেকে নিবন্ধন কেন্দ্রে শুরু হবে ছবি তোলাসহ তথ্য রেজিস্ট্রেশনের কাজ। হালনাগাদ শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে জানুয়ারিতে, যারা একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ জানান, বুধবারের পর তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি না গেলেও বাদ পড়া ভোটারযোগ্য নাগরিক বছরের যে কোনো সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলায় গিয়ে তথ্য দিয়ে ভোটার হতে পারবেন।
চলমান হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহ করার পর যেখানে নিবন্ধনের কাজ হবে সেখানে গিয়েও নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করা যাবে। বর্তমানে ১০ কোটি ১৮ লাখের বেশি ভোটার রয়েছে তালিকায়। হালনাগাদ শুরুর প্রাক্কালে এবার প্রায় ৩৫ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হবে বলে ধারণা করেছিল ইসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সহকারী উপ সচিব আবুল কাসেম বলেন, তথ্য সংগ্রহের কাজ ভালোভাবে চলছে। আশা করি, লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে। এদিকে, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। মাঠ কর্মকর্তাদের কেউ এ কাজে গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাবধান করে দিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থা। হালনাগাদ কাজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ চলাকালে সোমবার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে কমিশনের উপ-সচিব আবুল কাসেম স্বাক্ষরিত ইসির ওই নির্দেশনা পাঠানো হয়।
২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ৯ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ কাজ চলবে। তথ্য সংগ্রহের পর তিনটি ধাপে ডিসেম্বরের মধ্যে নাগরিকদের ছবি ও তথ্য নিবন্ধন করা হবে। যাদের বয়স ১ জানুয়ারি ২০০০ বা তার আগে অর্থাৎ ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে এবার তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। কোনো কোনো এলাকায় তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি না গিয়ে একটি নির্ধারিত স্থানে গিয়ে ফরম পূরণের কাজ সারছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানতে চাইলে উপ-সচিব আবুল কাসেম বলেন, শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ ভালো চলছে, এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। আশা করি, সুষ্ঠুভাবেই তথ্য সংগ্রহ শেষ করা যাবে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হালনাগাদ কার্যক্রমে রোহিঙ্গারা যাতে কোনোমতেই ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে না পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এ কাজে কারও গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের পাশাপাশি বিশেষ কয়েকটি এলাকার বিশেষ কমিটির কাছেও ওই নির্দেশনার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর ‘দমন অভিযানের’ পর নতুন করে কমপক্ষে আরও ৫০ হাজার মানুষ সেখান থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে সরকারের ভাষ্য। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে, তারা বাংলাদেশের ভোটার হতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, হালনাগাদ কার্যক্রমে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দেশের চার জেলার ৩০টি উপজেলার উপর বিশেষ নজর রাখছে ইসি। এরমধ্যে কক্সবাজার জেলার ৮টি, বান্দরবানের ৭টি, রাঙামাটির ৮ এবং চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হলো- কক্সবাজারের সদর উপজেলা, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া ও বাঁশখালী।
< Prev | Next > |
---|