rtyfvbbbস্টাফ রিপোর্টার: সিস্টেম লসেই পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রতি বছর অতিরিক্ত শত শত কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। মূলত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত যে পরিমাণ বিদ্যুতের অপচয় হয় তা-ই সিস্টেম লস নামে পরিচিত। বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের মাধ্যমে তড়িৎশক্তি প্রবাহকালে কিছু অংশ তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি সাব-স্টেশন থেকে বিতরণ লাইন অনেক দূরে হলেও সিস্টেম লসের পরিমাণ বাড়ে। তাছাড়া পুরনো বিতরণ লাইন, অবৈধ সংযোগ ও মিটার রিডিং কম দেখানোর কারণেও সিস্টেম লস হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য মাত্রা অনুযায়ী সিস্টেম লসের সর্বোচ্চ হার ৫ শতাংশ। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ক্ষেত্রে ওই হার দ্বিগুণেরও বেশি। আর বেশি সিস্টেম লসের কারণে আরইবির অতিরিক্ত ক্ষতি হচ্ছে বছরে ৮৪২ কোটি টাকা। আরইবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আরইবি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে ৭৯টি সমিতির মাধ্যমে তা গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমানে আরইবির আওতায় গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ। তার মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ১ কোটি ৫৯ লাখ। বাকি ১৯ লাখ ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প, বাণিজ্যিক, দাতব্য ও সেচ গ্রাহক। পিডিবির কাছ থেকে কেনা বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত বিতরণ ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত সিস্টেম লসের পরিমাণ ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর ১ শতাংশ সিস্টেম লসের বিপরীতে সংস্থাটির লোকসান দাঁড়ায় মাসে ১২ কোটি টাকা। ওই হিসাবে অতিরিক্ত ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ সিস্টেম লসের কারণে আরইবির বাড়তি লোকসান হচ্ছে মাসে ৭০ কোটি টাকার বেশি। বছর হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪২ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, আরইবির গড় সিস্টেম লস ১০ দশমিক ৮৫ হলেও কোনো কোনো সমিতির চিত্র আরো ভয়াবহ। বিতরণ সংস্থাটির ৭৯টি সমিতির মধ্যে ৫৯টিরই সিস্টেম লস ১০ শতাংশের উপরে। তার মধ্যে ৩০টি সমিতি রয়েছে যেগুলোর সিস্টেম লস ১০-১২ শতাংশ। তাছাড়া ১২-১৫ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে ২০টি সমিতির। আর ১৫ শতাংশের বেশি সিস্টেম লস নিয়ে চলছে আরইবির ৯টি সমিতি। আরইবির বিতরণ লাইনগুলো দুর্গম এলাকায় হওয়ায় অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির চেয়ে সিস্টেম লস বেশি সংস্থাটি সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন। তাদের মতে, গাছপালা ভেঙে ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় বিতরণ লাইন ক্ষডুগ্রস্ত হয়। তাতে সিস্টেম লস দেখা দেয়। তাছাড়া উপকেন্দ্র থেকে বেশি দূরত্বে লাইন নেয়ার ফলেও বিতরণে সিস্টেম লসের পরিমাণ বেড়ে যায়।

সূত্র আরো জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগ জ্বালানি দক্ষতার ওপর জোর দিয়ে সিস্টেম লস এক অংকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। আর তার অংশ হিসেবে আরইবিও ব্যয়বহুল জ্বালানিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। ওসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কারিগরি বিষয়ে নিয়মিত সভা করে দুর্বলতা নির্ণয়, দ্রুত লোড বিভাজন এবং লাইন ও উপকেন্দ্র বাড়ানো। তারপরও গত এক বছরে আরইবির ১৩টি সমিতিতে সিস্টেম লস বেড়েছে। ওই সমিতিগুলো হলো সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, শরীয়তপুর, কুড়িগ্রাম, চাঁদপুর-২, রাজবাড়ী, কুমিল্লা-২, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, রংপুর-১ ও দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২।

এদিকে আরইবির সিস্টেম বেশি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরইবিতে এখনো অবৈধ ও বাইপাস সংযোগ রয়েছে। ওসব অবৈধ সংযোগ ও বাইপাস লাইনের বিদ্যুৎ হিসাবের বাইরে থেকে যায়। ফলে পিডিবি থেকে কেনা বিদ্যুৎ ও বিতরণকৃত বিদ্যুতের পরিমাণের মধ্যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়। সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাকে সিস্টেম লস বলে চালিয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া মিটার রিডিং কর্মীরাও শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের যোগসাজশে রিডিংয়ের চেয়ে কম ইউনিট হিসাব করে। ওসব কারণে আরইবির সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য মাত্রায় আসছে না। অথচ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিতরণ লাইন অন্যান্য সংস্থার চেয়ে উন্নত। ফলে ওই ধরনের বিতরণ লাইনে ৫ শতাংশের বেশি সিস্টেম লস হওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ। বর্তমানে ১০ শতাংশের বেশি সিস্টেম লসের কারণ হতে পারে আন্ডারবিলিং ও অবৈধ সংযোগ। যদিও সংস্থাটির বিতরণ লাইনে এখনো কিছু পুরনো তার রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে সংস্থাটি বেশ অগ্রগতি করেছে। সিস্টেম লস কমানোর জন্য নতুন নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বেশি সিস্টেম লস প্রসঙ্গে আরইবির পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ হোসাইন জানান, সিস্টেম লস যতো কমিয়ে আনা যায় বিতরণ কোম্পানি ততো বেশি লাভবান হয়। গত ৮ বছরে আমরা সিস্টেম লস অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ধীরে ধীওে তা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

সাম্প্রতিক