স্টাফ রিপোর্টার : অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকলের (ভিওআইপি) মাধ্যমে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ কোটি কল মিনিটের বেশি কল হচ্ছে। ওসব কল থেকে সরকার কোনো রাজস্বই পাচ্ছে না। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নানামুখী চেষ্টা করেও তা ঠেকাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ ভিওআইপি রোধে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যেও দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চু্িক্ত করেছে বিটিআরসি। ওই দুই প্রতিষ্ঠান অবৈধ পথে কল শনাক্ত করার কাজ করবে। সেজন্য বিটিআরসি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মাসের শেষদিকেই ওই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হবে। আর তা হলে অবৈধ ভিওআইপি অনেকাংশে কমে যাবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বৈধ সিম দিয়েই অবৈধ কল আসছে। ওই কল বিটিআরসি কোনভাবেই বন্ধ করতে পারছে না। ফলে বৈধ পথে প্রতিদিন কল নেমে এসেছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি মিনিটে। তাতে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। বিগত ২০১৫ সালে বৈধ পথে প্রতিদিন গড়ে ১২ কোটি মিনিটের বেশি কল দেশে আসতো। হঠাৎ করেই এই সংখ্যা ২০১৬ সালে কমতে শুরু করে। আর চলতি বছরের শুরুতে অবৈধ কল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কল সংখ্যা এখন প্রতিদিন সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি মিনিটে নেমে এসেছে। কমে যাওয়া কল বেশির ভাগই অবৈধ ভিওআইপি হয়ে দেশে আসছে। অবৈধ পথে কল যারা আনছেন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তারা সমাজে প্রভাবশালী এবং সরকারের উচ্চ মহলের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সেজন্য প্রমাণ থাকার পরও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে ৭টি আইজিডব্লিউ (ইন্টারনেট গেটওয়ে) অপারেটর জোট বেঁধে কলরেট দেড় থেকে দুই সেন্ট বাড়ানোর ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির কোনো অনুমতি ছাড়াই আধা সেন্ট করে কলরেট বাড়িয়ে দিয়েছে। বিটিআরসি ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার চিঠি দিলেও তারা বিটিআরসির বেঁধে দেয়া কলরেট দেড় সেন্টে নামিয়ে আনছে না। এই প্রেক্ষিতে বিটিআরসি আন্তর্জাতিক কলরেট পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ আইজিডব্লিউগুলো আন্তর্জাতিক কলরেট বাড়িয়ে দেয়ায় কারণে গ্রাহকদের কলরেটও বেড়ে গেছে। বিদেশে কল করা কিংবা বিদেশ থেকে দেশে কল করলে গ্রাহকদের আগের তুলনায় বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। আগে ৭ টাকা মিনিটে কল করা গেলেও এখন ওই কল ৯ টাকার কাছাকাছি চলে গেছে। কিন্তু বাড়তি টাকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার।
সূত্র জানায়, বিটিআরসির নিয়মানুযায়ী প্রতি মিনিট কল থেকে যে আয় হয় বিটিআরসি তার ৪০ শতাংশ, ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, মোবাইল অপারেটর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আইজিডব্লিউ অপারেটরগুলো বাকি ২০ শতাংশ পায়। দেশে ২১টি আইজিডব্লিউ অপারেটরের মধ্যে ৭টি আইজিডব্লিউ অপারেটর সিন্ডিকেট করে কলরেট বাড়ানোর ফলে আগের নিয়মেই অর্থের অংশ পাচ্ছে সরকার। নতুন নিয়মে মাত্র ৭টি অপারেটর কল টার্মিনেট বা গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে এমন প্রক্রিয়ায় ওই আইজিডব্লিউগুলো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে আর আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো বাড়তি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছে। ফলে বৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান এক লাফে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি মিনিট কমে গেছে। আগে বৈধভাবে প্রতিদিন সাড়ে ১১ থেকে ১২ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান হতো। এখন বৈধভাবে কল আদান-প্রদান হচ্ছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি মিনিট। আর অবৈধ পথের টাকা চলে যাচ্ছে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের পকেটে।
সূত্র আরো জানায়, আন্তর্জাতিক কল কমে যাওয়ার জন্য দুটি বিষয়কে দায়ি করছে বিটিআরসি। তার মধ্যে কল সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য বেশি দায়ি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটররা। তারা কল রেট দেড় থেকে দুই সেন্ট করে বৈধ পথে কল সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। ওই কলগুলোর মধ্যে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটির মিনিটের বেশি। যদিও বিষয়টি বিটিআরসি জিরো টলারেন্স দৃষ্টিতে দেখছে। অবৈধ ভিওআইপিতে কোনো সিম ধরা পড়লে আগে ৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করা হতো। এখন সময় কমিয়ে ২ ঘণ্টা করা হয়েছে। তাছাড়া কোনো মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে তা ধরতে এখন জার্মানির সিগসের ও যুক্তরাজ্যের থ্রিডিআইয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। অবৈধ ভিওআইপিতে কারো সিম ধরা পড়লে ৫০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া ওটিটির, ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ ও ইমোর মতো ওটিটি কল বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক কলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ওই কারণেও কিছু কল কম হতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, বিদেশ থেকে কল আনার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবং ইন্টারনেট ডেটাভিত্তিক ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈধ পথে কল আসা কমে যাচ্ছে। সিম নিবন্ধন না হলে (বায়োমেট্রিক) বৈধ পথে কলের সংখ্যা আরো কমে যেতো। চেষ্টা করা হচ্ছে বৈধ পথে কীভাবে কল বাড়ানো যায়। মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্কে অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) হচ্ছে কিনা তা ধরতে জার্মানির সিগসের ও যুক্তরাজ্যের থ্রিডিআইয়ের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ওই দুটি প্রতিষ্ঠান অবৈধ কল শনাক্তের কাজ করে আসছে।
< Prev | Next > |
---|