rmg garmentsস্টাফ রিপোর্টার: সরকার দেশের বস্ত্র খাতকে আইনি কাঠামোর আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। সে লক্ষ্যে নতুন বস্ত্র আইনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আর তার মাধ্যমেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে বস্ত্র শিল্পের হাজার হাজার কারখানা। দীর্ঘ তিন দশক সরকারি কোনো আইন ছাড়াই দেশে ওই শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। ওই শিল্প নিয়ন্ত্রণে এতোদিন কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষও তৈরি হয়নি। তবে নতুন বস্ত্র আইনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণে আসছে বস্ত্র শিল্প। বস্ত্র পরিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পোশাক খাতের সংযোগ শিল্প হিসেবে আশির দশকেই এদেশে রফতানিমুখী বস্ত্র কারখানা গড়ে উঠতে থাকে। ওই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে হোমটেক্সটাইল ও টেরিটাওয়েল পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পও। অনুমোদিত বস্ত্র আইনে বস্ত্র শিল্প বলতে বস্ত্র বা তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি, অ্যালাইড টেক্সটাইল ও প্যাকেজিং উপাদান উৎপাদন, বস্ত্রপণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, গুদামজাত, আমদানি ও রফতানি, বিক্রয় ও বাজারজাত, বায়িং হাউজসহ সব কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে।

তাছাড়া ওই সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকেও তার আওতাভুক্ত উল্লেখ করা হয়েছে। আর আইনের আওতায় বস্ত্র খাতের পোষক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বস্ত্র পরিদফতর। ওই কর্তৃপক্ষের তালিকা অনুযায়ী দেশের মোট ১০টি অঞ্চলে ৯ হাজার ৪০টি বস্ত্র শিল্প-সংশ্লিষ্ট কারখানা রয়েছে। ওসব কারখানা মোট ৭টি সংগঠনের সদস্য। ওই সংগঠনগুলোর মধ্যে আছে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ, বিএলএমইএ, বিজিএপিএমইএ ও বিএসটিএমপিআইএ। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে ৪ হাজার ৬৭০টি। বিকেএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫০০, বিটিএমএর ১ হাজার ৪৩০, বিটিটিএলএমইএর ৮২, বিএলএমইএর ৫৭, বিজিএপিএমইএর ৮৫৩ এবং বিএসটিএমপিআইএর ৪৪৮। সব মিলে মোট কারখানা ৯ হাজার ৪০টি। অনুমোদনের মাধ্যমে ওসব কারখানা ইতিমধ্যে আইনি কাঠামোয় চলে এসেছে। এখন বস্ত্র পরিদফতর অধিদফতরে রূপান্তরের মাধ্যমে বস্ত্র শিল্পের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।

সূত্র জানায়, অনুমোদিত আইন অনুযায়ী পোষক কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ব্যতিত বস্ত্র শিল্প-কারখানা পরিচালনা করা যাবে না। মিথ্যা তথ্য প্রদান বা প্রতারণার মাধ্যমে নিবন্ধন গ্রহণ করলে তা বাতিল হবে। তাছাড়া শর্ত লঙ্ঘন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিলম্ব ফি ব্যতীত নিবন্ধন না করলে এবং কোম্পানি-সংস্থা-অংশীদার কারবার বা আইনগত সত্তার ক্ষেত্রে অবসায়ন হলেও নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল হবে। নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিতের কারণে কোনো লোকসান বা ক্ষতির জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠান কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না। বস্ত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হবে পোষক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। পরিদর্শনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বস্ত্র শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা পরিদর্শন করবেন। সেক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে শিল্প মালিক কর্তৃপক্ষকে। সহযোগিতা না করলে তা হবে অপরাধ। পরিদর্শনে পোষক কর্তৃপক্ষ সুতা ও বস্ত্রের মজুদ কার্যক্রম, বাজারজাত এবং মূল্য স্থিতিকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং প্রয়োজন মনে করলে নির্দেশনা জারি করবে। পরিদর্শনের জন্য পোষক কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলগত সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও গ্রহণ করবে সরকার।

সূত্র আরো জানায়, দেশে বস্ত্র কারখানা আছে এমন ১০ জেলার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারখানা আছে এমন জোনগুলো হলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম। নরসিংদীসহ মোট পাঁচটি জোনে দেশের বস্ত্র কারখানার ৯৭ শতাংশ অবস্থিত
এদিকে অনুমোদিত আইনের বিষয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, নতুন কোনো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিল্পকে সহযোগিতা করা হবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। কোনো ধরনের হয়রানি চাই না। এমনিতেই ব্যবসায়ীদের অনেক কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হয়। পোশাক খাত একটি মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো বিড়ম্বনা আমরা চায় না।

অন্যদিকে বস্ত্র পরিদফতরের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, বস্ত্র শিল্পকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা হলেও উদ্দেশ্য থাকবে ওই শিল্পের আরো বিকাশ ঘটানো। বেসরকারি খাত নিজ থেকেই বর্তমান পর্যায়ে বিকশিত হয়েছে। এখন ওই বিকাশ আরো সুষম ও সুষ্ঠুভাবে যেন হয় সে বিষয়ে ভূমিকা পালন করবে পোষক কর্তৃপক্ষ। ঠিক নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা কাজ করতে চাই না।

সাম্প্রতিক