স্টাফ রিপোর্টার: রমজান ঘিরে এখনোই বেশ কিছু ভোগ্যপণ্য আমদানি ও মজুদ বাড়াতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। যদিও রমজান আসতে এখনো দুই মাসেরও বেশি সময় বাকি। মূলত রমজানে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বিবেচনা করে বিশ্ববাজারে পণ্যের সহনীয় দাম ও রোজার আগমুহূর্তে প্রশাসনের নজরদারি এড়াতেই ব্যবসায়ীরা এমন কৌশল নিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল, গমসহ বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দামই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে বাড়তি চাহিদার কারণে রোজা শুরুর এক মাস আগেই ওসব পণ্যের দাম তুলনামূলক বেড়ে যায়। তাই দাম বাড়ার আগেই ওসব পণ্য আমদানি করতে শুরু করছে ব্যবসায়ীরা। গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ব্যবসায়ীরা রমজানের ভোগ্যপণ্যের আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কাস্টমস ও বাজার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন ২১টি বড় জাহাজ থেকে ভোগ্যপণ্য খালাস হচ্ছে। ওসব জাহাজে প্রায় ১০ লাখ টন মটর, মসুর ডাল, অপরিশোধিত চিনি, ভোজ্যতেল ও লবণ রয়েছে। ওসব পণ্য খালাস শেষ হতে মার্চের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগবে। তাছাড়া কনটেইনারে করেও ছোলাসহ ডালজাতীয় পণ্য আমদানি বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে ছোলা এসেছে ২৭ হাজার টন। যদিও স্বাভাবিক সময়ে ছোলা আমদানি হয় প্রতি মাসে গড়ে ১০ হাজার টন। ওসব পণ্য আমদানি করেছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বিএসএম ও আমান গ্রুপ। বর্তমানে বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় যেসব পণ্য রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে গম। বন্দরের তথ্যানুযায়ী মোট ১১টি জাহাজে প্রায় ৬ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। আর কাস্টমসের হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে গম আমদানি হয়েছে ২৮ লাখ টন। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ লাখ টন বেশি। তাছাড়া গত কয়েক মাসে চিনি আমদানি কমে এলেও এখন বন্দরে একসাথে ৪টি জাহাজ থেকে চিনি খালাস হচ্ছে। ওই ৪টি জাহাজে চিনি আনা হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার টন। ওসব চিনি এনেছে পরিশোধন কারখানার মালিকরা। তার আগে চিনি আমদানি হতো প্রতি মাসে গড়ে পৌনে দুই লাখ টন।
সূত্র জানায়, বন্দরে এখন দুটি জাহাজ থেকে ভোজ্যতেল খালাস হচ্ছে। ওই দুই জাহাজে ভোজ্যতেল রয়েছে ২০ হাজার টন। তাছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ জাহাজে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টন। তার মধ্যে ৮৭ হাজার টনই অপরিশোধিত সয়াবিন তেল। তার আগে প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি হতো। তাছাড়া কনটেইনারের পাশাপাশি বন্দর দিয়ে বড় জাহাজে করে মসুর ও মটর ডালও আমদানি হচ্ছে। বন্দরে এখন তিনটি জাহাজে ১ লাখ ৯ হাজার টন মটর ও মসুর ডাল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ডালজাতীয় পণ্যের আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯২ হাজার টন বেড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, রমজান ঘিরে পণ্য আমদানি ও মজুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি পাইকারি পর্যায়ে কয়েকটি পণ্যের দামও বেড়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ছোলার দাম। গেল এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে প্রায় ২৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ ভালো মানের অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে। অথচ ফেব্রুয়ারির শেষভাগে একই মানের ছোলা বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে মাঝারি মানের প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও একই ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। ওই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে মণপ্রতি প্রায় ২৫০ টাকা। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে ৬ মাস ধরেই দফায় দফায় কমেছিল ছোলার দাম। তবে এখন পণ্যটির দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারে বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দামই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে রোজার এক মাস আগেই বাড়তি চাহিদার কারণে বিশ্ববাজারে ওসব পণ্যের দাম তুলনামূলক বেড়ে যায়। ওই কারণে দাম বাড়ার আগেই ওসব পণ্য আগেভাগে আমদানি শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া বন্দরে আনার পর ওসব পণ্য প্রক্রিয়াজাতের পর বাজারজাত করতে ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় লাগে। সেজন্যই ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই রমজানে ভোগ্যপণ্যের আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যদিও একসময় রমজানের এক মাস আগে থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্যের মজুদ ও দাম বাড়াতো। কিন্তু ওই মুহূর্তে প্রশাসনের নজরদারি থাকায় এখন রমজানের দু-তিন মাস আগেই পণ্যের মজুদ ও দাম বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। এক-দেড় মাস ধরে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও মজুদ শুরু হয়ে এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন আমদানিকারক থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী পর্যায়ে বেচাকেনা চলছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী জানান, এখন বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকায় গতবছরের তুলনায় পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। আর মে মাস পর্যন্ত ভোগ্যপণ্যের আমদানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
< Prev | Next > |
---|