বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এমনকি স্বল্প শিক্ষিত কিংবা লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিতরাও এ পদ্ধতিতে অর্থ লেনদেন করছে। এ ধরনের ব্যাংকিংয়ে তেমন ঝামেলা নেই। গত ডিসেম্বর মাসেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। দিনে গড় লেনদেন প্রায় ৭৭৪ কোটি টাকা। এ কাজে দেশব্যাপী এজেন্ট রয়েছে ৭ লাখেরও বেশি। বলা যায়, কর্মসংস্থানেও এ পদ্ধতি ভূমিকা রাখছে। নিবন্ধিত গ্রাহক ৪ কোটি ১১ লাখের মতো। কিন্তু পদ্ধতিটি অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়ায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। 'মোবাইল ব্যাংকিং : ফাঁদ পেতে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতারকরা এমনভাবে ফাঁদ পাতে, গ্রাহক কিছু বুঝে ওঠার আগেই অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অভিযুক্ত মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সিম রেজিস্ট্রেশনের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, যার মোবাইল নম্বরটি দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি এর কিছুই জানে না।
তবে কিছু অভিযোগ তদন্ত করে দেখা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মীরা প্রতারকদের হাতে গ্রাহকের গোপন তথ্য তুলে দেয়। বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি গেছে এমন কর্মীরাও তথ্য ফাঁস করেন। পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরাও প্রতারকদের তথ্য দিচ্ছে। এসব অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সেবা প্রদানকারীরা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আছেন। পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে এমন পরিবেশে অর্থ লেনদেন করা হয়, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যথেষ্ট ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কঠোর নজরদারি প্রত্যাশিত। একই সঙ্গে অপরাধীদের কঠোর শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি এবং এর সুফল অনেক। পাশাপাশি বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিন যে লেনদেন হচ্ছে, তার তুলনায় অপরাধ সংখ্যা হয়তো এখনও সামান্য। তাছাড়া বিদ্যমান পদ্ধতিতে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনও করা যায় না।
কিন্তু অপরাধচক্রকে দমন করতে না পারলে 'গরিবের সহজ লেনদেন ব্যবস্থা' হিসেবে স্বীকৃত মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে। কিন্তু বিশেষভাবে সক্রিয় হতে হবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী কোম্পানি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। এ পদ্ধতি কেবল সাধারণ মানুষের লেনদেন সহজ করেনি, অর্থনৈতিক কর্মকা-ও গতিশীল করেছে। বিশেষভাবে গ্রামীণ অর্থনীতি চাকা সচল হয়েছে। প্রতারক চক্র ও কুচক্রী মহলকে এ পদ্ধতি ভ-ুল করতে দেওয়া যাবে না।
< Prev | Next > |
---|