aeeryrd1স্টাফ রিপোর্টার: ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে এদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নতুন বাজার সৃষ্টিতে ১৫টি দেশকে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ওই নতুন বাজারগুলোতে প্রথম দিকে রপ্তানি ভালো হলেও ক্রমেই তা কমছে। অথচ নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য সরকার উদ্যোক্তাদের ৩ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু তারপরও নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। মূলত উদ্যোক্তারা ওই সুবিধা কাজে লাগাতে পারছে না। অথচ দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের বাজার বহুমুখীকরণের লক্ষ্য সামনে রেখেই নতুন বাজারগুলো চিহ্নিত করা হয়। মূলত ২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত হলে তার প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি দেখা দেয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পায় না, তবুও দেশটি ওই সুবিধা বাতিল করলে পোশাক রপ্তানিও কমতে থাকে। তাছাড়া বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের আরেক প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যে ১৫টি দেশকে নতুন বাজার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে ১০টিতেই রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কোনো দেশে প্রবৃদ্ধি ২৭ শতাংশ, কোনোটিতে ১৭ শতাংশ আবার কোনোটিতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন বাজারে দেশের তৈরি পোশাকের প্রবৃদ্ধিতে পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে একেক বাজারে একেক রকম কারণ রয়েছে। ব্রাজিলসহ নতুন বাজারের কয়েকটি দেশে মুদ্রার দরপতন ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ওই দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। তাছাড়া নতুন বাজার ব্রাজিলে অর্থনৈতিক মন্দাও চলছে। ওই কারণেও দেশটিতে পোশাক রপ্তানি কমেছে। পাশাপাশি দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে ২৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। সেটিও একটি বড় কারণ। তাছাড়া ভারতে পোশাক রপ্তানিতে খুব একটা সুবিধা করা যাচ্ছে না। কারণ দেশটি নানা রকম ট্যারিফ-নন ট্যারিফ ব্যরিয়ার দিয়ে রেখেছে। আর অস্ট্রেলিয়া সরকার বিমানে করে পোশাক রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে তারও প্রভাব পড়ছে। এভাবে একেক দেশে একেক রকম সমস্যায় নতুন দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানিতে ভালো সুবিধা করা যাচ্ছে না। তবে আশা করা যায় আগামীতে ওসব সংকট কেটে গেলে নতুন দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি বাড়বে।

সূত্র জানায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) নতুন দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানিতে মন্দাভাব যাচ্ছে। তাতে দেখা যায় নতুন বাজারগুলোর মধ্যে ব্রাজিলে গতবছরের ৯ মাসের চেয়ে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গতবছর ওই সময়ের মধ্যে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি হয় ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। অথচ চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি হয় ৭ কোটি ৫৭ লাখ ২০ হাজার ডলারের। অর্থাৎ গত বছরের ৯ মাসের চেয়ে এ বছরের ৯ মাসে ব্রাজিলে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার ডলারের বা ২৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গতবছর ৯ মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয় ১০ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। এবার হয়েছে ৮ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার ডলারের। অর্থাৎ গতবছরের চেয়ে কম হয়েছে ১ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার ডলার। দক্ষিণ আফ্রিকায় গতবছরের ৯ মাসের তুলনায় এবার পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গতবছর দেশটিতে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৫ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারের। এবার হয়েছে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গতবারের চেয়ে কম হয়েছে ৮৯ লাখ ১০ হাজার ডলার। আরেক নতুন বাজার দক্ষিণ কোরিয়ায় পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গতবছর দেশটিতে পোশাক রপ্তানি হয় ১৫ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার ডলারের। এ বছরের ৯ মাসে হয়েছে ১২ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অর্থাৎ গতবছরের চেয়ে এবার দক্ষিণ কোরিয়ায় পোশাক রপ্তানি কমেছে ২ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। তাছাড়া নতুন বাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় অস্ট্রেলিয়াকে। দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের অনেকেরই নজর ওই দেশটির দিকে। কিন্তু ওই দেশটিতেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছে উদ্যোক্তারা।

গতবছরের চেয়ে দেশটিতে এবার রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গতবছর অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক রপ্তানি হয় ৪৯ কোটি ৮০ লাখ ডলারের। এ বছরের ৯ মাসে হয় ৪৫ কোটি আট লাখ ৫০ হাজার ডলারের। অর্থাৎ এবার কম হয়েছে ৪ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। নতুন বাজারগুলোর মধ্যে আরেকটি সম্ভাবনাময় দেশ প্রতিবেশী ভারত। ওই দেশটিতেও গতবছরের চেয়ে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ভারতে গতবছরের ৯ মাসে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ১০ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের। এ বছর হয়েছে ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। অর্থাৎ গতবছরের চেয়ে কম হয়েছে ৮২ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। তাছাড়া তুরস্ক, জাপানসহ অন্য কয়েকটি নতুন দেশে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি না হলেও রপ্তানি আয় বেড়েছে খুবই সামান্য, ১ থেকে ২ শতাংশ। তবে নতুন বাজারগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু রাশিয়া, চিলি এবং চীন। তার মধ্যে রাশিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে ৫৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, চিলিতে ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং চীনে বেড়েছে ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ।

এদিকে নতুন বাজারে দেশের তৈরি পোশাকের কম প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, বিজিএমইএ ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন বাজার সন্ধানের বিকল্প নেই। রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকাভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে সরকার হয়তো সহযোগিতা দিচ্ছে তবে আরো সহযোগিতা দরকার। সেই সাথে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে কাজ করতে হবে। ওসব দেশগুলোতে মেলাসহ আরো পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তবেই নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে।

 

সাম্প্রতিক