স্টাফ রিপোর্টার: দেশে যে পরিমাণ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব রয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি নিষ্ক্রিয়। অথচ প্রতি বছরই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে নিষ্ক্রিয় হিসাবের সংখ্যাও। মূলত তিন মাসে কোনো লেনদেন হয়নি এমন হিসাবকেই নিষ্ক্রিয় ধরা হয়েছে। আর ওই সময়ে অন্তত একটি লেনদেন হয়েছে এমন হিসাবের হার প্রায় ৩৯ শতাংশ। বাকি ৬১ শতাংশ হিসাবই নিষ্ক্রিয়। গতবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১০ লাখ ৭৮ হাজার। তিন মাসে অন্তত একটি লেনদেন হয়েছে এমন সংখ্যা ছিল মাত্র ১ কোটি ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার। বিগত ২০১৩ সালে মাত্র ৫০ শতাংশ হিসাব নিষ্ক্রিয় থাকলেও পরের বছর তা প্রায় ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়। তাছাড়া ২০১৫ সালে মোট হিসাবের ৫৫ শতাংশ নিষ্ক্রিয় ছিল। তবে গত বছর শেষে তা ৬১ দশমিক ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে আইটি অপারেশন অব ব্যাংকস শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি মজবুত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যতোবারই নির্দেশনা বা সুপারিশমালা দিয়েছে, তার বিপরীতে এজেন্টরা নানা ধরনের ফাঁকফোকর বের করেছে। সেবাটি চালুর সময় এজেন্টদের হিসাব খোলার ওপর বিশেষ সুবিধা দেয়ার কারণে এজেন্টরা নামে-বেনামে হিসাব খুলেছে। শুরুতে একটি হিসাব খুললে এজেন্টদের ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। ফলে অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে লেনদেন করেছে তারা। সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে একটি হিসাব চালু রাখার বিধান করা হলেও এজেন্টরা তাদের পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের নামে হিসাব চালু করছে, যেগুলোর সিংহভাগই নিষ্ক্রিয় থাকছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১০ হাজার। ওসব এজেন্ট ১৪৭ কোটি ৩২টি লেনদেনের মাধ্যমে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা লেনদেন করেছে।
সূত্র জানায়, এদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডাচ্-বাংলা। রকেট নামে ওই সেবা দিচ্ছে ব্যাংকটি। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করার পর নতুন ধারার ওই ব্যাংকিং শুরু হয়। আর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের হাত ধরে ২০১১ সালে দেশে যাত্রা হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের। পরে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারে আসে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। ২০১২ সালে বেসরকারি খাতের ইউসিবি ইউ-ক্যাশ ও ইসলামী ব্যাংক নিয়ে আসে এম-ক্যাশ। ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরই মার্কেন্টাইল ব্যাংক মাই-ক্যাশ ও ওয়ান ব্যাংক ওকে ব্যাংক নামে সেবাটি চালু করে। একই বছর আইএফআইসি ব্যাংকও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে।
সূত্র আরো জানায়, মোবাইল ব্যাংকিং দেশের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কেওয়াইসি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি লেনদেনের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা বা তার বেশি নগদ অর্থ জমা বা উত্তোলনে গ্রাহককে পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডের ফটোকপি প্রদর্শনসহ রেজিস্টারে গ্রাহকের স্বাক্ষর বা টিপসই সংরক্ষণের যে নির্দেশনা দিয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন জরুরি। কারণ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক তৈরি বা হিসাব চালু অনেকটাই এজেন্টনির্ভর। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের প্রণোদনা দিতে হচ্ছে। তবে এজেন্টরা হিসাব চালুর ক্ষেত্রে সুবিধার অপব্যবহার করছে। যার বোঝা কিছুটা গিয়ে ব্যাংকের ওপর পড়ছে। অথচ সামনের দিনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আরো সম্প্রসারণ হবে। পরিস্থিতির উন্নয়নে একটি শক্তিশালী নীতিমালা প্রয়োজন।
এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব নিয়ে গবেষণা পরিচালনায় জড়িত মো. মাহবুবুর রহমান জানান, গবেষণা পরিচালনার সময় একজনের নামে ৭শ’টি হিসাব চালুর তথ্যও পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তিকে মোবাইলের সিম রাখার জন্য একটি বক্স রাখতে হয়। হিসাব নিষ্ক্রিয় হওয়ার ওই ধরনের নানা তথ্য গবেষণায় উঠে এসেছে। অথচ মোবাইল ব্যাংকিং জাতীয় অর্থনীতির গতিশীলতার জন্য প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশের সিংহভাগ ব্যবসায়ীই ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং গত কয়েক বছরে দেশের অভ্যন্তরেই মানুষের গতিশীলতা বেড়েছে। অন্যান্য পেশাজীবীরও ভ্রাম্যমাণ অর্থের প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। সঠিক সময়ে অর্থ পেলে তাদের কাজে গতিশীলতা আসতে বাধ্য। তবে ব্যাংকিংটি হতে হবে সঠিক ও কার্যকর নিয়মনীতি মেনে উপযুক্ত তদারকির মাধ্যমে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, হিসাব নিষ্ক্রিয় হওয়ার বিষয়টি সাধারণ ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে ৬ মাস হলেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে তা ৩ মাস। সেজন্য কিছু হিসাব নিষ্ক্রিয় হচ্ছে। তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ছে। তাছাড়া লেনদেনের নতুন নতুন বিষয়ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আরো গতিশীলতা আনতে নিয়মনীতির সঠিক বাস্তবায়ন তদারকি করা হচ্ছে।
< Prev | Next > |
---|