policeeeস্টাফ রিপোর্টার: দেশের পুলিশ বাহিনী তীব্র যানবাহন সঙ্কটের মধ্যেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রতি বছরই পুলিশে লোকবল বাড়লেও সে তুলনায় যানবাহন বাড়ানো হয়নি। আর বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে যেসব যানবাহন রয়েছে তার অর্ধেকই ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে অভিযানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি তদন্ত কার্যক্রমেও কালক্ষেপণ হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আপৎকালীন সঙ্কট মোকাবেলায় পুলিশকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া ও রিকুইজিশন করে চলতে হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর ওসব সমস্যা সমাধানে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশ কয়েকটি প্রকল্পের চাহিদাপত্র দিয়েছে। তার মধ্যে তিনটি প্রকল্প একনেকের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। কিন্তু তার বিপরীতে যানবাহন রয়েছে ৯ হাজার ৬৬টি। তার মধ্যে মোটরসাইকেল ৫ হাজার ২০৪টি আর মাইক্রোবাস, পিক-আপ ভ্যান, ক্যারাভ্যান, জিপসহ অন্যান্য যানবাহন রয়েছে ৩ হাজার ৮৬২টি। কিন্তু পুলিশের মোট যানবাহনের ৫ হাজারেরও বেশি ৫ থেকে ১৫ বছরের পুরনো। তাছাড়া তুলনামূলক বেশি সময় ধরে ব্যবহারের কারণে পুলিশের যানবাহনগুলো অন্যান্য সংস্থার যানবাহনের তুলনায় অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ওঠে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশে বর্তমানে যে যানবাহন রয়েছে তার সামগ্রিক অবস্থা খুব ভালো নয়। অধিকাংশ যানবাহনই পুরনো ও জরাজীর্ণ। ওসব যানবাহন দিয়ে দ্রুত ও সময়মতো অপারেশন পরিচালনা করা এবং ঘটনাস্থলে পৌঁছা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ও যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারই ধারাবাহিকতায় পুলিশের পক্ষ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে তিনটি প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। ওই তিন প্রকল্পের মাধ্যমে ডিএমপি, পিবিআই ও নৌ পুলিশ কয়েকশ কোটি টাকার যানবাহন পাবে। তার মধ্যে রয়েছে ৬৫০টি ডাবল পিক-আপ ভ্যান, ৩০টি প্রিজন ভ্যান, ৩০টি রেকার, ৩০টি মিনিবাস, ৪০টি মাইক্রোবাস, ১৪০টি জিপ, ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৪৪টি বাসসহ ৯৯৪টি যানবাহন। তাতে মোট খরচ হবে ৬০৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। তবে ওই যানবাহনগুলো কয়েক ধাপে ২০১৮ সালের মধ্যে পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত করা হবে। আর প্রস্তাবনা অনুযায়ী ওসব গাড়ির মধ্যে ডিএমপি পাবে ১৮৮টি ডাবল কেবিন পিক-আপ ভ্যান, ২৫টি প্যাট্রল কার, ৫০টি ট্রাক, ৫০টি মিনি ট্রাক, ৫২ আসনবিশিষ্ট ৫০টি বাস, ২০টি প্রিজন ভ্যান, ১০টি জিপ, সাতটি প্রটেকশন জিপ ও দুটি ক্যানাইন ভ্যান এবং ১০০টি ২৫০ সিসি মোটরসাইকেল ও দুই শতাধিক ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। এসব নাগরিকসহ ভিভিআইপি ও ভিআইপি এবং দেশী-বিদেশী অতিথিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ডিএমপির। কিন্তু অপর্যাপ্ত যানবাহনের কারণে ডিএমপিকেপ্রায় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বড় কোনো অনুষ্ঠান থাকলে গাড়ি সঙ্কটের কারণে পুলিশের পক্ষে নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হয়। তখন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন থেকেও গাড়ি আনতে হয়। তাছাড়া গাড়ি সঙ্কটের কারণে নিয়মিত গাড়ি ভাড়া ও রিকুইজিশন করতে হয়। তবে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ওসব সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রান্সপোর্ট) একেএম হাফিজ আক্তার জানান, পুলিশের যানবাহনগুলোকে অন্য সংস্থার সঙ্গে তুলনা করলে হবে না। পুলিশের যানবাহন প্রায় ২৪ ঘণ্টাই চলে। অচিরেই পুলিশ সদস্যের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যাবে। তাই আরো যানবাহনের দরকার। সে লক্ষ্যেই আড়াই হাজার কোটি টাকার যানবাহন কেনা হবে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী পুলিশের তিনটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। তিনটি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকার যানবাহন পাচ্ছে ডিএমপি। তারা পাচ্ছে ২০০ কোটি টাকার যানবাহন।

সাম্প্রতিক