আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শক্তিশালী রক্ষাব্যুহের প্রস্তুতিতে ১৪ মিনিট বেশি সময় নয়; উত্তর কোরিয়া মধ্য পাল্লার একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে তার প্রভাব মোকাবেলায় এই সময়টুকুই হাতে পাবে গুয়ামবাসী, যদিও এ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তাও নেই তাদের।
রয়টার্স বলছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকির মধ্যেও গুয়ামবাসী তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন ভাবনা ছেড়ে দিয়েছে; চেষ্টা করছে অনিশ্চিত ভাগ্যকে মুঠোয় পোরার।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপের কর্তৃপক্ষ শুক্রবার এক লাখ ৬৩ হাজার অধিবাসীর উদ্দেশ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর করণীয় নিয়ে এক সহায়ক নির্দেশনা জারি করেছে, যেখানে হামলার পর দ্রুত লুকিয়ে পড়া এবং তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব এড়াতে কী কী করা যেতে পারে তার উল্লেখ আছে।
কর্তৃপক্ষের আশংকা, পিয়ংইয়ং গুয়ামকে লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে কিংবা এর নিকটবর্তী জলসীমায় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে; দুটোর যে কোনোটিই গুয়ামবাসীর জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে।
যদিও কর্তৃপক্ষের মতো তাড়াহুড়ো দেখা যাচ্ছে না দ্বীপবাসীদের মধ্যে। তারা ব্যস্ত দৈনন্দিন কর্মকা-ে।
দ্বীপের বাসিন্দা ৩৭ বছর মাইক বেনাভেন্তে ফেইসবুকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার খবর দেখেছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন; এরপরও তার কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে পরিবারের সঙ্গে মিলে সমুদ্রসৈকতে বারবিকিউ পার্টি করা। সেখানে বসেই ভেবেছেন হামলার সময় খাদ্য মজুদ ও আশ্রয়ের কথা। হামলার প্রস্তুতি? সে আমি নিচ্ছি। যদি একটি বড় ক্ষেপণাস্ত্র এদিকে আসে, তাহলে তো সবাই মারা পড়ব। ক্ষেপণাস্ত্রর জন্য আমি কি প্রস্তুতি নেবো?, বার্গার এবং হট ডগের জন্য গ্রিল বানাতে বানাতে এমনটাই মন্তব্য করেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের এ রক্ষণাবেক্ষণকারী। ‘ক্ষেপণাস্ত্র হুমকিতে দ্রুত করনীয়’ শীর্ষক হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের নির্দেশনায় কংক্রিটের জানালাবিহীন ঘর, অফিস ও স্কুল নির্মাণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো তেজস্ক্রিয়তার বেশিরভাগ অংশকে শুষে নিতে সক্ষম। হামলা বিষয়ক কোনো সতর্কতা জারি হলে গুয়ামবাসীকে নিকটস্থ আশ্রয়স্থল খুঁজে সেখানে অন্তত ২৪ ঘণ্টা অবস্থানেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে। হামলার সময় যারা বাইরে থাকবেন তাদের শুয়ে পড়ে নিজের মাথা ঢাকতে নির্দেশনায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্ধত্বের হাত থেকে বাঁচতে তীব্র আলোর ঝলকানি বা আগুনের গোলার দিকে না তাকাতেও বলা হয়েছে। এমন সব জরুরি নির্দেশনায়ও তোড়জোড় দেখা যায়নি গুয়ামের তুমন সমুদ্রসৈকত সংশ্লিষ্ট হোটেলগুলোতে।
বেশ কয়েকটি হোটেল এবং রিসোর্টের কর্মচারিরা জানান, তারা নির্দেশনার কথা শুনেছেন।
টাইফুন, সুনামি, সন্ত্রাসী হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে হোটেল খালি করার পরিকল্পনার কথা আমরা জানি, তবে উত্তর কোরিয়া মিসাইল হামলা চালালে কি করতে হবে তা আমরা জানি না, বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিসোর্ট সুপারভাইজার।
কাছাকাছি অন্য এক হোটেলের ব্যবস্থাপক জানান, তার কাছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার ছাপানো কপি আছে, তবে এগুলো অতিথিদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে কি না সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
মধ্য অগাস্টের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের গুয়ামে চারটি মাঝামাঝি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়া।
যার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আগুন নিয়ে খেলার এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে, যা বিশ্ব আগে দেখেনি।
হংকং শহরের অর্ধেক আয়তনের সমান গুয়াম যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ- থেকে ৭ হাজার কিলোমিটার দূরে। মার্কিন নৌ ও বিমান ঘাঁটি থাকার কারণেই দ্বীপটি উত্তর কোরিয়ার লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার এসব ঘাঁটি থেকে দুটি বি-ওয়ান বি সুপারসনিক বোমারু বিমান কোরীয় উপদ্বীপে মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। এটি প্রশান্ত মহাসাগরে মোতায়েন করা মার্কিন থাড ইন্টারসেপ্টরের স্থায়ী ঘাঁটিও। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গুয়ামের অধিবাসী ও পরর্যটকদের আশ্বস্ত করে বলছে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা ‘স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স আমব্রেলা’ যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলায় পারদর্শী, যে কারণে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আমাদের বিশ্বাস হামলা সফল হওয়ার সম্ভাবনা শুন্য শুন্য, শুন্য শুন্য, শুন্য- মোট পাঁচটি শুন্য এবং তারপর একটি এক, শুক্রবার এমনটাই বলেন গভর্নরের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপদেষ্টা জর্জ সারফৌরজ। হুমকির মাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, ব্যবসা বাণিজ্যও চলছে স্বাভাবিক গতিতে, বলেন তিনি।
শনিবার এই ছিল গুয়ামের পরিস্থিতি, যেখানে প্রায় একই রকম দুশ্চিন্তামুক্ত দেখা গেছে এর অধিবাসীদেরও। শপিংমল এবং সমুদ্রসকৈতগুলো ছিল লোকারণ্য; ফিরোজা রংয়ের সমুদ্রের সঙ্গে খেলা করছিল শিশুরা, বাবা-মা’রা ব্যস্ত ছিল বিয়ার খেতে খেতে পিকনিকের প্রস্তুতিতে। আমি আসলে প্রস্তুতি নিয়ে ভাবিইনি। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলে কি করতে হবে তা আমরা জানি না, বলেন ৩৭ বছর বয়সী হিসাবরক্ষক মারলেন। আমাদের হাতে আছে মোটে ১৪ মিনিট; সামরিক বাহিনী বলেছে তারা প্রস্তুত, তাই আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখছি। একই মত অটো পার্টস বিক্রেতা মিচ আগনেরও। সারাদিনমান মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকা এ ৫১ বছর বয়সী ব্যক্তি বলছেন, প্রস্তুতি নেওয়া অর্থহীন। যখন আমরা হামলার কথা শুনতে পাবো তখন এতটাই দেরি হয়ে যাবে যে আমাদের মত সাধারণের জন্য আশ্রয়স্থলে জায়গাই থাকবে না। আমরা পরিণত হবো মৃত মাংসে।
< Prev | Next > |
---|