continarস্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানির পর খালাস না হওয়া পণ্যভর্তি কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। ওসব পণ্য খালাস না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের কার্যক্রম। একই সাথে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকারও। এ পরিস্থিতিতে বন্দরের কার্যক্রম নির্বিঘœ করতে এবং রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে দ্রুততর সময়ে ওসব পণ্য নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। আর ওই কার্যক্রমের আওতায় ইতিমধ্যে ৬টি কনটেইনারের এক লাখ কেজি আপেলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সংশ্লিষ্ট এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাধারণত আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দরে নামানোর ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না নিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ চালানের যাবতীয় নথি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে আমদানিকারককে পণ্য খালাসের জন্য ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেয় কাস্টমস। এ সময়ের মধ্যে পণ্য খালাসের ব্যাপারে আমদানিকারক সাড়া না দিলে নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমস তা নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরে বিগত ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত খালাস নেয়া হয়নি এমন চালানের সংখ্যা ২ হাজার ৮২০। ওসব চালানের পণ্য ৪ বছর ধরে বন্দরে পড়ে থাকলেও নিলামের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি কাস্টমস। ওসব চালানের আড়াই হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৫ হাজার ৭৯০টি কনটেইনার ইয়ার্ডে পড়ে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার চাপে চলতি মাসের শুরুর দিকে ওসব চালান নিলামে তোলার ফাস্ট ট্র্যাক কর্মসূচি হাতে নেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস।

সূত্র জানায়, আমদানিকারকরা মূলত আমদানির পর দেশে পণ্যের মূল্য কমে যাওয়া, আমদানির সপক্ষে মূল দলিলাদি উপস্থাপন করতে না পারা, অনিয়ম ধরা পড়ার পর আমদানিকারক কর্তৃক জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানানো অথবা পণ্য খালাসের ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিপুল পরিমাণ পণ্য খালাস নেয়নি।

সবচেয়ে বেশি নিলামযোগ্য পণ্য রয়েছে কাস্টমসের ৯(বি) গ্রুপের অধীনে। ওই গ্রুপ দিয়ে বিভিন্ন গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি হয়ে থাকে। গত ৪ বছরে আমদানির পর খালাস না নেয়া ওসব পণ্যের শুল্কসহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩০ কোটি টাকারও বেশি। খালাস না নেয়া সবচেয়ে বেশি নিলামযোগ্য পণ্য থাকার তালিকায় তারপরই রয়েছে শুল্কায়ন গ্রুপ-১ (খাদ্যপণ্য— বিভিন্ন ফলসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্য) ও গ্রুপ-২ (বিটুমিন, পাথর, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী)। এ দুটি গ্রুপ দিয়ে আমদানিকৃত খালাস না নেয়া পণ্যের মূল্য যথাক্রমে ৫১০ কোটি ও ৩৪০ কোটি টাকা। তাছাড়া ২০০ কোটি টাকার বেশি নিলামযোগ্য পণ্য রয়েছে গ্রুপ-৯(সি), গ্রুপ-৮(এ) ও গ্রুপ-৫(বি)তে। গ্রুপ-৯(সি) দিয়ে সব ধরনের ইলেকট্রনিকস পণ্য, গ্রুপ-৮(বি) দিয়ে ইস্পাতের তৈরি পাইপ ও কাঠামো এবং গ্রুপ-৫(বি) দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়। তাছাড়াও বিভিন্ন সিরামিক, কেমিক্যাল, প্লাস্টিক ও রাবারজাতীয় শিল্পের কাঁচামালও রয়েছে নিলামযোগ্য পণ্যের তালিকায়।

সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের মে মাসের শুরুর দিকে দুটি ও মাঝামাঝিতে একটি চালানে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ৬ কনটেইনার আপেল আমদানি করে চট্টগ্রামের আজিজিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ওসব পণ্য আমদানিকারক খালাস না নেয়ায় ১ লাখ ৪ হাজার ৩৬০ কেজি পরিমাণ ওসব আপেল নিলামে তোলার উদ্যোগ নেয় কাস্টমস। তাছাড়া আরো শতাধিক কনটেইনারভর্তি পচনশীল পণ্যের নিলাম ঈদের পর অনুষ্ঠিত হবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ খান জানান, নিয়ম অনুযায়ী খালাস না নেয়া চালানের একটি তালিকা করা হয়েছে। চালানের পণ্যগুলোর মধ্যে যেগুলো খাওয়া বা ব্যবহারের উপযোগী, সেগুলো শিগগিরই নিলামে তোলা হবে। আর ব্যবহারের অনুপযোগী পণ্য বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে উপযুক্ত উপায়ে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন লোকবল না থাকায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার কার্যক্রম কমে এসেছিল। সম্প্রতি এ শাখায় দুজন সহকারী কমিশনারসহ ১৫ জন শুল্ক কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব নিলামযোগ্য পণ্যের ইনভেন্টরি (পণ্যের বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্তীকরণ) শেষে সেগুলো নিলামে তোলা হবে।

সাম্প্রতিক