স্টাফ রিপোর্টার: মওদুদ আহমদ তিন দশক ধরে গুলশানের যে বাড়িতে বসবাস করে আসছেন, সেই বাড়ি ছাড়তে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ গতকাল রোববার এই রায় দেয়। গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ১৫৯ নম্বর প্লটের ওই বাড়ি মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন (নামজারি) করে ডিক্রি জারির রায় দিয়েছিল হাই কোর্ট। কিন্তু আপিল বিভাগে গতবছর ২ অগাস্ট ওই রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে মওদুদের বিরুদ্ধে সরকারি বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলাও বাতিল করে আপিল বিভাগ। মওদুদের পাশাপাশি তার ভাই মনজুর আহমদ নামজারি বাতিলের বিরুদ্ধে এবং দুদক মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি রিভিউ আবেদন করেছিল। ওই দুই আবেদনও আপিল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছে। রিভিউয়ের এই রায়ের ফলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা মওদুদ আহমদকে গুলশানের ওই বাড়ি হারাতেই হচ্ছে। তবে সরকারি বাড়ি আত্মসাতের মামলা থেকে তিনি রেহাই পাচ্ছেন। আদালতে মওদুদ নিজেই রিভিউ শুনানিতে অংশ নেন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও কামরুল হক সিদ্দিকী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আবদুল মতিন খসরু ও খুরশীদ আলম খান। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি বিরোধী দলে আছি বলে আজকে এ মামলায় সাত বছর পরে আপিল করেছে সরকার। বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানেতো (রায়ে) সরকারকে স্বত্ত্ব দেওয়া হয়নি, অধিকার দেওয়া হয়নি। আমরা মূল মালিকের সঙ্গে বোঝাপড়া করব। ওঁর ছেলে করিম সুলায়মান আছেন। তাছাড়া আদালতও কিছু পর্যবেক্ষণ দেবেন।
সরকার বাড়ি ছাড়তে বললে কী করবেন- এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে কি আইন নাই? আমি আইনের আশ্রয় নিব। আদালতের আশ্রয় নিব। বাড়ি ছাড়ব না।
মওদুদ বাড়ি ছাড়বেন না বলে যে বক্তব্য সাংবাদিকদের সামনে দিয়েছেন, তা ‘এক ধরনের ধৃষ্টতা’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ বাড়ি তিনি ছাড়বেন না বা এ বাড়িতে যে তিনি থাকবেন, একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে এ কথা বলাতো ধৃষ্ঠতা। আমি মনে করি এর চেয়ে বড় ধৃষ্ঠতা আর হতে পারে না। অন্য যে কোনো দেশে হলে এ প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিবিদ হিসেবে সম্মান রক্ষার স্বার্থে বাড়ি ছেড়ে দিতেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বাড়ি অবশ্যই ছাড়তে হবে। বাড়িটা বর্তমানে নিয়ে নেওয়া সরকারের দায়িত্ব। মওদুদ আহমদ তার ভাইয়ের নামে বাড়িটির মূল মালিকের সঙ্গে যে চুক্তি দেখিয়েছিলেন, সেটার মামলা আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। রায়ে বলা হয়েছিল- পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এবং চুক্তিটা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে।
মাহবুবে আলম বলেন, ওই বাড়ির মূল মালিক অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজ ১৯৮৫ সালের ৩০ মার্চ মারা যান। আর মওদুদের ভাইয়ের নামে ওই প্লটের বায়না চুক্তিতে তারিখ দেখানো হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ১০ অগাস্ট। তার মানে মালিক মরা যাওয়ার পাঁচ মাস পরে। আর বাড়ি পাওয়ার জন্য ওঁরা মামলা করেছিলেন ১৯৯৩ সালে। আপিল বিভাগ রাইটলি বলেছেন, তাদের নামে নামজারি হবে না।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, অবৈধভাবে একজন লোক থাকবে আর সরকার সেটা মেনে নেবে, তা হতে পারে না। এ মামলায় মওদুদ সাহেব একটি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেখিয়েছিলেন, যেখানে তার ভাই তাকে বাড়িটি দেখাশুনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। অথচ তার ভাইয়েরও সেখানে অধিকার নাই। তার মামলা ডিসমিস হয়ে গেছে উচ্চ আদালতে।
মূল মালিকের সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন বলে যে বক্তব্য মওদুদ দিয়েছেন, সে বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, মালিক তো বিদেশি। স্বাধীনতার পরে আসেনি কোনো সময়েই। এখানে ছিলই না। ওঁর এ সমস্ত কথা দুঃখজনক। মূল মালিকের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে মামলায় হেরে গিয়ে এ কথা বলাও দুঃখজনক। অবশ্যই বাড়ি ছাড়তে হবে।
Â
< Prev | Next > |
---|