স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে বর্তমানে জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত অর্থবছর হিসাব করা হয়। তবে এই অর্থবছর পরিবর্তনের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বর্তমানে অর্থবছর হিসাব করা হয় জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত। তবে সরকারের সামনে দুটি প্রস্তাবনা রয়েছে। একটি এপ্রিল থেকে মার্চ এবং আরেকটি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস। অবশ্য বেশিরভাগ মত পক্ষে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। এর আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।
এ সময় অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা অর্থমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু দাবি-দাওয়া ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী এ কে এম এ হামিদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি-এ সময়টাকেই আর্থিক লেনদেনের সময়কাল হিসেবে বিবেচনা করে। রাষ্ট্রীয়ভাবে অর্থবছর জুলাই থেকে জুন হলেও ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিই হলো সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক লেনদেনের মূল সময়। এজন্য আমাদের প্রস্তাবনা হলো ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এই সময়টাকে অর্থবছর হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থবছর পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। যা কিছু করা হোক, চিন্তাভাবনা করেই করা হবে। এ সময় প্রকৌশলীরা দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য তাঁদের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রীর কাছে। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে ওঠার হার খুব কম। এ নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো পরিকল্পনাও কেউ করছে না। এখন থেকে সমন্বিত উদ্যোগ না নেওয়া হলে এই শতাব্দী শেষে দক্ষ জনশক্তি আর পাওয়া যাবে না।
কর্মদক্ষতা বাড়াতে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বাড়ানো হবে: মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়াতে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বুধবার সচিবালয়ে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী একথা বলেন। একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের নেতারা। এ সময় তারা অর্থমন্ত্রীর কাছে কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। মুহিত বলেন, আমাদের সরকার ২০১১ সালে স্কিলস ফর ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট গ্রহণ করে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করে। এই প্রজেক্টটি আমব্রেলা প্রোজেক্ট, এর অধীনে গত ছয় বছরে ৮-১০টি প্রজেক্ট হয়েছে। সেখানে একটা জিনিস অত্যন্ত প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে, সেটা হল আমাদের এভারেজ স্কিলস কম। এখনও আমরা যেসব মানুষ রপ্তানি করি মোস্টলি আনস্কিলস, আর স্কিলসড হলেও সামান্য স্কিলস।
মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে সরকার সচেতন জানিয়ে মুহিত বলেন, এজন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, প্রত্যেক উপজেলার একটি করে কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটাতে সময় লাগবে, সময় ছাড়াও অর্থ সাপেক্ষ। মাস্টার পাওয়াই সব চেয়ে বেশি কষ্ট, মাস্টার ভালো না হলে তো স্কিলস এর কোনো দাম থাকে না। আমাদের এখন মেইন গোলই হচ্ছে টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিটিউশনগুলোকে সংখ্যায় বাড়ানো, এজন্য জনবল প্রয়োজন, বিশেষ করে ট্রেইনারের প্রয়োজন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এই সমস্যা (কম স্কিলস) নিয়ে সচেতন আছি। কারণ অর্থনৈতিক স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিষয়টি ঘনিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট। ফারদার গ্রোথ আর শুধু ইনভেস্টমেন্টে হবে না। ফারদার গ্রোথের জন্য মোর দ্যান ইনভেস্টমেন্ট হোয়াট উই নিড আর স্কিলসড, হায়ার স্কিলসড লেভেল।
আমি অ্যাসিউর করতে পারি আমাদের লক্ষ্য সে দিকেই নির্দিষ্ট আছে। অষ্টম বেতন কাঠামোর মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আগে যেমন নাম ছিল- সব চেয়ে কম বেতনের দেশ। পে-স্কেলের মাধ্যমে বেতন বাড়ানোর পর এখন সব দেশের সঙ্গে এটা (বেতন) তুলনা করা যায়। সেই কারণে ইনক্রিমেন্টের যে বিধান ছিল সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। ইনক্রিমেন্ট পদ্ধতি বাদ দেওয়া হলেও কেউ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারের একটি মন্ত্রিসভা কমিটি তা বিবেচনা করে বলেও জানান মুহিত।
< Prev | Next > |
---|