স্টাফ রিপোর্টার: কয়েকদিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে খোলা পণ্য আমদানিকরাকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। কারণ বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের পাশাপাশি বন্দর ইয়ার্ড, কর্ণফুলী ঘাট ও বেসরকারি ডিপোগুলোতে খোলা পণ্যের খালাস বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এমনকি ২দিন ধরে একইভাবে বন্ধ রয়েছে বন্দরের জেটিতে কনটেইনার ও খোলা পণ্যের কায়িক পরীক্ষাও। ফলে ওসব পণ্যের আমদানিকারকদের বাড়তি মাশুল পরিশোধের পাশাপাশি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মূলত বহির্নোঙর ছাড়া অন্য সব স্থানে খোলা পণ্য খালাস ও পরীক্ষণে পর্যাপ্ত শেড বা ছাউনির ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীদের এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্দরের বহির্নোঙরে কনটেইনারবাহী জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হলেও বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কায় বাল্ক জাহাজে আসা পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে খোলা পণ্য খালাস না হওয়া ৩৬টি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। আর ওসব জাহাজ থেকে পণ্য নিয়ে খালাস করার অপেক্ষায় রয়েছে দুই শতাধিক লাইটার (ছোট) জাহাজ। তার মধ্যে শুধুমাত্র কর্ণফুলীর ১৬টি বাণিজ্যিক ঘাট ও আশপাশে রয়েছে ৬০টির মতো লাইটার জাহাজ। তাছাড়া পর্যাপ্ত শেড বা ছাউনি না থাকায় আটকে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে থাকা এক হাজারের বেশি কনটেইনারের কায়িক পরীক্ষা ও নিয়মিত তদারকিও। বাল্ক জাহাজে আসা পণ্যের মধ্যে কয়লা, জ¦ালানি ও ভোজ্যতেল, সিমেন্ট ক্লিংকার, স্ক্র্যাপ, অপরিশোধিত চিনি, সার, বিটুমিন, কয়েল, মোটর, ডাল, চাল, গমসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য উল্লেখযোগ্য। তবে খোলা পণ্যের মধ্যে পাথর বা কংক্রিট-জাতীয় পণ্য বৃষ্টিতে ভিজলে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা না থাকায় এ ধরনের পণ্য খালাসে সমস্যা হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের মাত্র ২৫ শতাংশ আসে কনটেইনারে করে। বাকি ৭৫ শতাংশ পণ্যই আসে বাল্ক জাহাজ, অয়েল ট্যাংকার ও ব্রেক জাহাজের মাধ্যমে। কনটেইনার ব্যতিত অন্য সব জাহাজে আমদানিকৃত পণ্যই খোলা পণ্য হিসেবে পরিচিত। বাল্ক জাহাজে পণ্য খোলা অবস্থায় ও ব্রেক জাহাজে বস্তাবন্দি অবস্থায় পণ্য আমদানি করা হয়। অয়েল ট্যাংকারে আসে জ¦ালানি ও ভোজ্যতেল জাতীয় পণ্য। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে বাল্ক জাহাজে করে। ওসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে না ভিড়ে বহির্নোঙর থেকে লাইটার জাহাজে করে কর্ণফুলী নদীর ১৬টি বাণিজ্যিক ঘাট ও দেশের বিভিন্ন স্থানে খালাস করা হয়। তাছাড়া বন্দরের ওপর চাপ কমাতে ৩৬টি আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য বেসরকারি ডিপোয় খালাসের বাধ্যবাধকতা থাকায় বেশকিছু পণ্য ওসব ডিপোয় পড়ে রয়েছে। কিন্তু ওসব ডিপোয়ও পর্যাপ্ত শেড বা ছাউনি না থাকায় সেখানেও একই ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে বহির্নোঙরে তিনটি বাল্ক জাহাজে প্রায় দেড় লাখ টন পণ্য খালাস করতে পারেনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপ। ভেসেল এসপ্যান, ভেসেল কলাম্বিয়া ও ভেসেল জুনিফার নামের এ তিন মাদার ভেসেলে করে ওসব পণ্য অস্ট্রেলিয়া, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পণ্য নষ্টের পাশাপাশি ঝুঁকি রয়েছে। তবে কর্ণফুলী ঘাট ও বন্দরের ইয়ার্ডে পর্যাপ্ত শেড বা ছাউনি থাকলে সেখানে ওসব পণ্য সহজেই খালাস করা যেত। তাছাড়া কর্ণফুলী ঘাটে ওসব পচনশীল পণ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের সুযোগ দেয়াও জরুরি। কিন্তু ওসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব না দেয়ায় ব্যবসায়ীদের বাড়তি মাশুলের পাশাপাশি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বন্দরের ইয়ার্ডে পর্যাপ্ত ছাউনি নেই। টানা বৃষ্টির কারণে কনটেইনার পরীক্ষণের জন্য ৬-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার পানিতে নষ্ট হতে পারে এমন পণ্যভর্তি কনটেইনার খোলাও যাচ্ছে না। একই অবস্থা তৈরি হয়েছে বেসরকারি ডিপোতেও। সেখানেও বেশকিছু পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। যদিও পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হয় এমন ধরনের পণ্য সবসময়ই বৃষ্টির সময় খালাস কিংবা ওঠানো-নামনো বন্ধ থাকে। আমদানির সিংহভাগ যেহেতু বাল্ক জাহাজে করে আসে তাই ভোগান্তিও বেশি। টানা বৃষ্টিতে পণ্যবোঝাই দুই শতাধিক লাইটার জাহাজ খালাস করতে পারছে না। একই কারণে বহির্নোঙরে খালাসের জন্য অপেক্ষমাণ জাহাজ থেকেও পণ্য আনা যাচ্ছে না। তাছাড়া খোলা পণ্যের পাশাপাশি বন্দরের ইয়ার্ডে থাকা আমদানিকৃত পণ্যভর্তি কনটেইনার পরীক্ষণেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। নজরদারিতে থাকা কনটেইনার শতভাগ কায়িক পরীক্ষা ছাড়াও প্রায় শতভাগ চালানের নমুনা পরীক্ষণ করা হয় বন্দরের ইয়ার্ডে। কিন্তু বর্তমানে বৃষ্টিতে নষ্ট হতে পারে, এমন পণ্যগুলোর কায়িক পরীক্ষা বা নমুনা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) জাফর আলম জানান, যেসব খোলা পণ্য শেডের ভেতর রয়েছে, সেগুলো হ্যান্ডলিংয়ে (ওঠা-নামা) সমস্যা হচ্ছে না। তবে শেডের বাইরে থাকা বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে শেড বাড়ানোর দাবি জানানো হলেও বর্তমানে বন্দরের ভেতরে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
< Prev | Next > |
---|