rmgস্টাফ রিপোর্টার: যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে এখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজারে পরিণত হয়েছে জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় জার্মানিতে চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৩ কোটি ডলার। এ সময়ে জার্মানিতে রফতানি বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশের বেশি।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে আট মাসে রফতানি হয়েছে ৩৪২ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পোশাক। জার্মানিতে পোশাক রফতানিতে আয় হয়েছে ৩৫৫ কোটি ডলার।

রফতানি কিছুটা কমলেও আগের মতো তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, আড়াই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে ধীরগতি রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাকের মোট রফতানির প্রায় ২১ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) এ হার কমে দাঁড়ায় ২০ শতাংশ। চলতি বছরের গত আট মাস শেষে এ হার ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। পোশাক রফতানির শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র ছিল বাংলাদেশের প্রধান বাজার। যদিও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে কখনও শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়নি দেশটি; বরং অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশি পণ্যে বেশি হারে শুল্ক আদায় করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি কমে যাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে টাকা-ডলার বিনিময় হারকে বড় কারণ মনে করেন বাণিজ্য-বিশ্লেষক এবং রফতানিকারকরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা কমলেও বেড়েছে প্রতিযোগী চীন ও ভিয়েতনামের। এর পেছনে প্রধান কারণই হচ্ছে মুদ্রার বিনিময় হার। প্রতিযোগী সব দেশ ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার দর কমিয়েছে, অথচ টাকাকে শক্তিশালী করে রাখা হয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা কমছে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের। তারা বলছেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

সূত্র অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকে ওভেন (শার্ট-প্যান্ট) ক্যাটাগরিতে রফতানি আয় কমেছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২১ কোটি ডলার কমে রফতানি হয়েছে ২৫৮ কোটি ডলারের পণ্য। অপর খাত নিটের (গেঞ্জিজাতীয় পোশাক) অবস্থা আরও খারাপ। আয় কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। আগের ৯৩ কোটি ডলার থেকে আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি ডলার।

ওভেনের তুলনায় নিটের খারাপ অবস্থার কারণ সম্পর্কে বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, প্রধান প্রতিযোগীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাতে বাংলাদেশের বেশি সময় লাগে, যা রফতানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। টেক্সঅয়েভের এমডি এবং বিজিএমইএর পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, টাকা-ডলার বিনিময় হারের বিষয়টির বাইরে অন্য কারণ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠায় সেখানে কম দামের মৌলিক পণ্যের চাহিদা কমেছে।

বাংলাদেশ যেহেতু এ ধরনের পোশাকই বেশি উৎপাদন করে, সে কারণে রফতানিতে মন্দা যাচ্ছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাজোটের নেতৃত্বে কারখানা পরিদর্শন এবং ব্যাপক হারে যে সংস্কার চলছে, তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না ছোট-মাঝারি উদ্যোক্তারা। শুল্কমুক্ত সুবিধায় ইউরোপের বাজারে টিকে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এ সুবিধা না থাকায় কঠিন প্রতিযোগিতায় ছিটকে পড়ছে অনেক কারখানা।

এদিকে, তৈরি পোশাকসহ সব পণ্যের রফতানি আয় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও প্রধান বাজার। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে মোট রফতানি হয়েছে ৩৮৪ কোটি ডলারের পণ্য। আর জার্মানিতে রফতানি হয়েছে ৩৭৮ কোটি ডলারের পণ্য। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্য রফতানি থেকে এসেছে ৪২ কোটি ডলার। জার্মানি থেকে এসেছে ২৩ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের বাইরের উল্লেখযোগ্য রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে চামড়া ও চামড়াপণ্য, চিংড়ি, প্লাস্টিক, তামাক, সিরামিক, ফার্নিচার, সবজি, লবণ, পাথর, চুনা, সিমেন্ট ইত্যাদি। বাংলাদেশের পোশাক আমদানিতে জার্মানির শীর্ষে উঠে আসার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রভাবশালী দেশ জার্মানির অর্থনীতি দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। এ কারণে সেখানে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে রফতানিও বেড়েছে। এ ছাড়া বড় ব্র্যান্ডের শোরুম রয়েছে সেখানে। দেশটির মাধ্যমে ইউরোপের অন্য অনেক দেশে পোশাক সরবরাহ হয়ে থাকে। সম্প্রতি এ প্রবণতা বেড়েছে। এ দুই কারণে জার্মানি এ দেশের পোশাক আমদানিতে শীর্ষে উঠে এসেছে।

সাম্প্রতিক