ইসলামের আলো
ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা.আত্মহত্যা কী? আত্মহত্যা মানে নিজকেনিজে ধ্বংস করা। নিজ আত্মাকে চরম কষ্ট ওযন্ত্রণা দেয়া। নিজ হাতে নিজের জীবনেরযাবতীয় কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো।
আমাদের বাংলাদেশে অনেক নারী-পুরুষ বিশেষত যুবতী বোনেরা জীবন সংগ্রামের পরিবর্তে জীবন থেকেপালিয়ে যাবার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তুচ্ছ পারিবারিক কলহ, বিদ্যালয়ের গমনাগন পথে বখাটেদের উৎপাত, ভালোবাসায় ব্যর্থতা ও প্রতারণা ইত্যাদিকে কেন্দ্রকরে তরুণীরা এবং স্বামীর নির্যাতন-অত্যাচার, যৌতুক সমস্যা, স্বামীর অর্থনৈতিক অক্ষমতা, পারিবারিক অশান্তিথেকে বাঁচার পথ হিসেবে অনেক মহিলা আত্মহত্যাকে বেছে নিচ্ছে।
এসবই বড়ভুল, এসব সমস্যা সব দেশে, সব জাতিতে আছে। আত্মহত্যা এসবের কোনো সুষ্ঠু সমাধান বাসঠিক প্রতিকার নয়।ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা পবিত্র কুরআনথেকে : এবার চলুন যাওয়া যাক আত্মহত্যা সম্পর্কে আমাদের শরীয়ত কী বলে? ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা কবীরা গুনাহ। শিরকেরপর সবচে বড় গুনাহ। সকল ফিকহবিদ এবং চারমাজহাবেই আত্মহত্যা হারাম।
কারণ, আল্লাহতা’আলা মানুষকে মরণশীল হিসেবেই সৃষ্টিকরেছেন। ধনী-গরীব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-প্রজা সবাইকে মরতেই হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ﴿ ﻛُﻞُّﻧَﻔۡﺲٖ ﺫَﺁﺋِﻘَﺔُ ﭐﻟۡﻤَﻮۡﺕِۖ ﺛُﻢَّ ﺇِﻟَﻴۡﻨَﺎ ﺗُﺮۡﺟَﻌُﻮﻥَ ٧٥ ﴾ [ : ﺕﻮﺒﻜﻨﻌﻟﺍ٧٥ ] ‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ {সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত : ৫৭} আর এমৃত্যু দান করেন একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়াকেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না। আল্লাহতা’আলা বলেন, ﴿ ﻫُﻮَﻳُﺤۡﻲِۦ ﻭَﻳُﻤِﻴﺖُ ﻭَﺇِﻟَﻴۡﻪِ ﺗُﺮۡﺟَﻌُﻮﻥَ ٦٥ ﴾ [ : ﺲﻧﻮﻳ ٦٥ ]‘তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান আরতাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।’ {সূরা ইউনুস, আয়াত : ৫৬}
উপরোক্ত আয়াত দুটি থেকে বুঝা যায় মানুষের মৃত্যু ঘটানোর কাজটি একমাত্র আল্লাহর। অতএব কেউ যদি কাজটি নিজের হাতে তুলেনেন, নিজের মৃত্যু ঘটাননিজের হাতে তবে তিনি অনধিকার চর্চাই করবেন। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। কেউ অনধিকার চর্চা প্রত্যাশা করে না। ইসলামেতাই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়েছে। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহবিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এরপরিণামেরকথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণাদায়কশাস্তির বর্ণনা দিয়ে মহা পবিত্র আলকুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।
আল্লাহরাববুল আলামীন বলেন, ﴿ ﻭَﻟَﺎﺗَﻘۡﺘُﻠُﻮٓﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢۡ ﺭَﺣِﻴﻤٗﺎ ٩٢ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻔۡﻌَﻞۡﺫَٰﻟِﻚَ ﻋُﺪۡﻭَٰﻧٗﺎ ﻭَﻇُﻠۡﻤٗﺎ ﻓَﺴَﻮۡﻑَ ﻧُﺼۡﻠِﻴﻪِ ﻧَﺎﺭٗﺍۚ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻋَﻠَﻰﭐﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺴِﻴﺮًﺍ ٠٣ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٩٢، ٠٣ ] ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে,অন্যায় ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো,আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০} আরেক আয়াতে আল্লাহতা‘আলা বলেন, ﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻠۡﻘُﻮﺍْ ﺑِﺄَﻳۡﺪِﻳﻜُﻢۡ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﺘَّﻬۡﻠُﻜَﺔِ﴾ [ : ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ٥٩١ ] ‘আরতোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসেনিক্ষেপ করো না।’
{সূরা আল-বাকারা,আয়াত : ১৯৫} হাদীসে নাববী থেকে : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই কাজটি থেকে নানা ভাবে বারণ করেছেন। এ থেকে মানুষকে সতর্ক করেছেন। যেমন : ছাবিত বিনযিহাক রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,« ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻋُﺬِّﺏَ ﺑِﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ».‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়েনিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিনতাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করাহবে।’ [বুখারী : ৫৭০০; মুসলিম :১১০] অপর এক হাদীছে রয়েছে, আবূ হুরায়রারাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «ﻣَﻦْ ﺗَﺮَﺩَّﻯ ﻣِﻦْ ﺟَﺒَﻞٍ ﻓَﻘَﺘَﻞَﻧَﻔْﺴَﻪُ ، ﻓَﻬْﻮَ ﻓِﻰ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ، ﻳَﺘَﺮَﺩَّﻯ ﻓِﻴﻪِ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﺤَﺴَّﻰ ﺳَﻤًّﺎ ﻓَﻘَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ، ﻓَﺴَﻤُّﻪُ ﻓِﻰﻳَﺪِﻩِ ، ﻳَﺘَﺤَﺴَّﺎﻩُ ﻓِﻰ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ ،ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺑِﺤَﺪِﻳﺪَﺓٍ ، ﻓَﺤَﺪِﻳﺪَﺗُﻪُ ﻓِﻰ ﻳَﺪِﻩِ ، ﻳَﺠَﺄُ ﺑِﻬَﺎﻓِﻰ ﺑَﻄْﻨِﻪِ ﻓِﻰ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ ». ‘যেব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকেনিক্ষেপকরে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামেযাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবেনিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকালধরে। যে ব্যক্তি বিষপানকরে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তারহাতে থাকবে।
জাহান্নামে সর্বদা সেওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতেথাকবে অনন্তকাল ধরে।যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যাকরেছে তার কাছে জাহান্নামে সেধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সেসর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।[সহীহ বুখারী : ৫৪৪২; মুসলিম : ১০৯] আবূহুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻣَﻦْ ﺧَﻨَﻖَ ﻧَﻔْﺴَﻪُﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓَﻘَﺘَﻠَﻬَﺎ ﺧَﻨَﻖَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻃَﻌَﻦَﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻃَﻌَﻨَﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ، ﻭَﻣَﻦِ ﺍﻗْﺘَﺤَﻢَ ، ﻓَﻘَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُﺍﻗْﺘَﺤَﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ». ‘যে ব্যক্তি ফাঁসলাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখেঅনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগকরতে থাকবে। আর যে বর্শার আঘাত দ্বারাআত্মহত্যা করে- দোজখেওসে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে। আর যেনিজেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে,কিয়ামতের দিন সে নিজেকে উপর থেকেনিক্ষেপকরে হত্যা করবে।’ [সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৯৮৭;তাবরানী : ৬২১] জুনদুব ইবন আবদুল্লাহরাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনিবলেন, রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,« ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻴﻤَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻜُﻢْ ﺭَﺟُﻞٌ ﺑِﻪِ ﺟُﺮْﺡٌ ﻓَﺠَﺰِﻉَ ﻓَﺄَﺧَﺬَﺳِﻜِّﻴﻨًﺎ ﻓَﺤَﺰَّ ﺑِﻬَﺎ ﻳَﺪَﻩُ ﻓَﻤَﺎ ﺭَﻗَﺄَ ﺍﻟﺪَّﻡُ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﺎﺕَ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺑَﺎﺩَﺭَﻧِﻲﻋَﺒْﺪِﻱ ﺑِﻨَﻔْﺴِﻪِ ﺣَﺮَّﻣْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ». ‘তোমাদেরপূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্যকরতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়েনিজের হাত নিজেইকেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারাযায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকেহত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করেফেলেছে।
তাই আমি তারজন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ [বুখারী :৩২৭৬; মুসলিম : ১১৩] আত্মহত্যা তো দূরে থাক,মৃত্যু কামনাও বৈধ নয় আত্মহত্যা তো দূরেরকথা আমাদের পবিত্রএই শরীয়ত কোনো বিপদে পড়ে বা জীবনযন্ত্রনায় কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনাকরতে পর্যন্ত বারণ করেছে। যেমন আনাসরাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতহয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻻَ ﻳَﺘَﻤَﻨَّﻴَﻦَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﻟِﻀُﺮٍّﻧَﺰَﻝَ ﺑِﻪِ ﻓَﺈِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻻَ ﺑُﺪَّ ﻣُﺘَﻤَﻨِّﻴًﺎ ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞِ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﺣْﻴِﻨِﻰ ﻣَﺎﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓُﺧَﻴْﺮًﺍ ﻟِﻰ ﻭَﺗَﻮَﻓَّﻨِﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻟْﻮَﻓَﺎﺓُ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻟِﻰ ».‘তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিতহয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকেপ্রত্যাশা করতেই হয়তবে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ আমাকে সেঅবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটাহয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনইমৃত্যু দিন যখন মৃত্যুই হয়আমার জন্য শ্রেয়।’ [বুখারী : ৫৬৭১; মুসলিম :৬৯৯০] আত্মহত্যাকারী জানাযা না পড়ানোআত্মহত্যা এতই গর্হিত কাজ যে এর প্রতিধিক্কারজানিয়ে অন্যদেরকে এ থেকে সতর্ক করতেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম আত্মহত্যাকারীর জানাযাত্যাগ করেন। যেমন জাবের বিনসামুরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﺃُﺗِﻰَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺑِﺮَﺟُﻞٍ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺑِﻤَﺸَﺎﻗِﺺَ ﻓَﻠَﻢْﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ . ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামসমীপে এক ব্যক্তিকে আনা হলো যিনিনিজেকে তরবারীর ফলা দিয়ে মেরেফেলেছে। ফলে তিনি তার জানাযা পড়লেননা।’ [মুসলিম : ২৩০৯]
< Prev | Next > |
---|