dmp coস্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলছেন, অস্ট্রেলিয়া দলের আগমন উপলক্ষে স্টেডিয়াম ও হোটেল এলাকার নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাইরে তিন স্তরের নিরাপত্তা রাখা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিক এসব কথা বলেন আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে কোনো থ্রেটের (হুমকি) কারণ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ১৫ আগস্টে যারা নাশকতার অপচেষ্টা করেছিল, আমাদের তৎপরতার কারণে তা নস্যাৎ হয়ে গেছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, একটি দুষ্টচক্র যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র চায় না, তারাই নানা রকম অপচেষ্টা করতে পারে এটি মাথায় রেখেই আমাদের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আগামি ২৭ থেকে ৩১ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার টিম ঢাকায় টেস্ট ম্যাচ লেখবে, এজন্য পুলিশ-বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড), ডিবি (মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা) ও অন্যান্য বাহিনী মিলে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানুষ নির্বিঘেœ যাতে খেলা দেখতে পারে, সে জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরো স্টেডিয়াম এলাকা সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ছাড়া মাঠ ও গ্যালারিকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। খেলোয়াড়রা যখন হোটেল রেডিসন থেকে স্টেডিয়ামে আসবেন, তখন মিরপুর ১০ নম্বর থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ভাসমান দোকান তুলে দেওয়া হবে, স্থায়ী দোকানগুলো ওই সময়ের জন্য ব্ন্ধ রাখা হবে। কমিশনার বলেন, খেলা দেখতে আসা দর্শকদের প্রত্যেক গেটে গেটে তল্লাশি করা হবে। ধারালো চাকু-কাঁচি, ম্যাচ, ব্যাগ, ট্রলিব্যাগ, চায়ের ফ্ল্যাক্স নিয়ে স্টেডিয়ামে ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না। আর খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার জন্য হোটেল রেডিসনের চতুর্দিকে সিসি টিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। হোটেল রেডিসন থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত খেলোয়াড়দের ভিভিআইপিদের মতো নিরাপত্তা দেওয়া হবে। সে জন্য পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স টহল সর্বদা থাকবে। এদিকে, গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁয়ের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ডেবিট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘কিশোর অপরাধ রোধে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের নিরাপত্তার মধ্যে সাইবার অপরাধ একটি নতুন ধরনের হুমকি।

এই সংখ্যা ধীরে ধীরে ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। আমরাও হিমশিম খাচ্ছি এই সাইবার ক্রাইমকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে। এটা বলাই বাহুল্য, সাইবার ক্রাইমকে মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা এখনো আমাদের হয়নি। মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে এই সাইবার অপরাধকে মোকাবিলা করা যায়। বিভিন্ন দেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কিছু বিধি-নিষেধ থাকে। আমাদের সরকারও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে একটা আইন প্রণয়নের কাজ করছে। যেহেতু সাইবার অপরাধ আমাদের দেশে নতুন করে শুরু হয়েছে, ফলে সরকারও চিন্তা করছে কীভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এরইমধ্যে সাইবার নিরাপত্তা একটা আইন পাসের প্রক্রিয়া চলছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তবে কিছুকিছু অ্যাপস ব্যবহারে কিছু বিধি-নিষেধ থাকা দরকার। যেমন হোয়াটস অ্যাপ, টেলিগ্রাফ, ভাইবার এসব থেকে আমরা কিন্তু জানতে পারছি না কে কী ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করছে। তা রাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্ষতিকর কি না? ঢাকা মহানগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা আরো বলেন, এই বিষয় নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয় চিন্তা করছে কীভাবে একটা আইন করা যায়। এই অ্যাপসগুলোর প্রোভাইডাররা সবাই ইউরোপের। তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ চুক্তি না থাকলে তাঁরা তথ্য দেবেন না। কাজেই তাদের সঙ্গে চুক্তি করে এবং জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা যাতে খর্ব না হয় সে দিক বিবেচনা করেই এই সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, কিশোর অপরাধ আমাদের জন্য একটা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু দিন আগে উত্তরায় একটা গ্যাং কালচার তৈরি হয়েছিল। কিশোর অপরাধের জন্য আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া অন্যতম একটা কারণ হতে পারে, তবে একমাত্র কারণ নয়। আমার সন্তান ঘরে কোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে তা আমি জানি না। সোশ্যাল মিডিয়ার তাঁরা কী ব্যবহার করছে সেটাই দেখার বিষয়। কোনোভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করা যাবে না। ডিএমপির একটা শক্তিশালী সাইবার অপরাধের দল রয়েছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০টা অভিযোগ তাদের কাছে আসে। ৯৯ ভাগ ভুক্তভোগী মামলা করতে চায় না। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে নানা অপরাধ হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্নভাবে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। সামাজিক সচেতনার মাধ্যমেই এই অপরাধ কামানো সম্ভব। একইসঙ্গে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ, কথা বলা, যুক্তি দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো বাড়াতে হবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

সাম্প্রতিক