স্টাফ রিপোর্টার: সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অস্থির দেশের চিনির বাজার। বাজারে চিনির কোনো সংকট না থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। মিল গেটে যে চিনি ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেই চিনিই খুচরা পর্যায়ে এসে হয়ে যাচ্ছে ৮০ টাকা। মাঝের প্রায় ২০-২২ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। অথচ যথাযথ বাজার ব্যবস্থাপনা থাকলে আরো কম মূল্যে ভোক্তারা চিনি কিনতে পারতো। চিনি খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চিনি প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ৫৬-৫৮ টাকা কেজিতে মিল থেকে চিনি বিক্রি করছে। ওই চিনি পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৬ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ সেখানেই কেজিতে প্রায় ৮ টাকা কমবেশি। ওই চিনিই আবার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। পাইকারি-খুচরায় ১৪ টাকার মতো দামের পার্থক্য তৈরি হয়েছে। অতিমুনাফার প্রবণতাই দেশের চিনির বাজারকে অস্থির করে তুলছে। মূরত রমজানের শুরু থেকেই চিনির বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। মাঝে ডলার ইস্যুতে দাম বৃদ্ধির কথা বলা হলেও ওই ইস্যু দূর হওয়ার পরও চিনির দাম কমেনি।
সূত্র জানায়, পাইকারি বিক্রেতারা খুব কম লাভে পণ্য বিক্রি করে থাকে। কিন্তু চিনির পাইকারি বিক্রেতারা প্রতি কেজি চিনিতে ৮ টাকা লাভ করে যাচ্ছে। তা দেখার কেউ নেই। আবার খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজিতে প্রায় ১৪ টাকা লাভ করলেও বাজারে ওই বিষয়ে কোনো ধরনের মনিটরিং দেখা যায় না। পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাবেই চিনির বাজারে কিছু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্য মতে, প্রতি রমজানে সারা দেশে চিনির চাহিদা রয়েছে আড়াই থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন। ৩ লাখ মেট্রিক টন চিনিতে এভাবে যদি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভ করে তবে সেটা কয়েকশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর ওই অতিমুনাফার চাপ এসে পড়ে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর।
সূত্র জানায়, পাইকারি ব্যবসায়ীদের একটি চক্র রয়েছে মিল থেকে চিনির সরবরাহ আদেশ নিয়ে নেয়। তারপর তারা শুধুমাত্র ওই অর্ডারগুলোই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করতে থাকে। তাতে করে বাজারে চিনির দামে বড় একটি পার্থক্য তৈরি হয়। ওসব ব্যবসায়ীদের সবারই যার যার মতো করে লিংক রয়েছে। সবাই নিজেদের মতো করেই চিনি মিল থেকে আনে। সেখানে কেউ অর্ডার নিয়ে বসে থাকে কথাটা ঠিক না। তা হলে তো বাজারের নিয়ন্ত্রকরা তা সহজেই ধরে ফেলতো।
এদিকে ঢাকায় টিসিবি তাদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলো এবং ট্রাক সেলের মাধ্যমে ৫৫ টাকায় চিনি বিক্রি করছে। পাশাপাশি চিনি প্রক্রিয়াজাতকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন পয়েন্টে ৬০ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করছে। তারপরও বাজারে চিনির দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বাংলাদেশ চিনি করপোরেশনের যে চিনি ৭০ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা সেটিও বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবের) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অকার্যকর হয়ে রয়েছে। তারা যদি বাজার মনিটরিংয়ে যথেষ্ট মনোযোগী হতো তাহলে ওসব ব্যবসায়ী পার পেতো না। ধরা পড়তো আর অতিমুনাফাও বন্ধ হতো।
Next > |
---|