স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটের আলোচিত সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়েছে হাই কোর্টে। এ মামলায় সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলামসহ আসামিকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল থাকবে কি না- তা জানা যাবে এই শুনানি শেষে। গতকাল সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে এ মামলার মৃত্যুদ-ের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষে পেপারবুক থেকে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নূর আহমেদ। মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে হাই কোর্টের অনুমতি নেওয়াকে ডেথ রেফারেন্স বলে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচিত এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করার পর ২০১৫ সালের নভেম্বরে তা হাই কোর্টে আসে।
পাশাপাশি বিচারিক আদালতের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাই কোর্টে আপিল করেন। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে ১৩ বছরের শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীদেরই এক সহযোগী নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিলে সারা দেশে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ। মামলার মূল আসামি কামরুল ইসলাম ওই হত্যাকা-ের দুই দিনের মাথায় পালিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। পরে ভিডিও দেখে প্রবাসীদের সহযোগিতায় তাকে আটক করে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। রাজন হত্যার দেড় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ওই বছর ১৬ অগাস্ট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুরঞ্জিত তালুকদার। মাত্র ১৭ কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর এ মামলায় যে রায় ঘোষণা করে, তাতে চারজনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। এ ছাড়া একজনের যাবজ্জীবনসহ পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদ- দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে কামরুল ইসলাম, ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল আহমদের ফাঁসির আদেশ হয় নিম্ন আদালতে।
নূর মিয়ার হয় যাবজ্জীবন সাজার রায়। কামরুলের এই সহযোগীই রাজনকে নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করেন, তারপর ছড়িয়ে দেন ইন্টারনেটে। কামরুলের তিন ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদকে সাত বছর করে কারাদ- দেয় আদালত। এক বছর করে দ- হয় দুলাল আহমদ ও আয়াজ আলীর। এক বছর করে কারাদ- হওয়া দুইজনকে এক হাজার টাকা করে এবং দ-প্রাপ্ত অন্যান্যের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। আসামিদের মধ্যে জাকির হোসেন পাভেল এবং কামরুলের ভাই শামীম আহমদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় ফিরোজ মিয়া, আজমত উল্লাহ ও রুহুল আমিনকে খালাস দেয় সিলেটের আদালত। এদিকে, এর আগে গত ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে একই হাইকোর্ট বেঞ্চে শেষ পর্যায়ে রয়েছে খুলনার শিশু রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি। এ দু’টি শেষ হলে পুলিশ দম্পতি হত্যায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলাটির ডেথ রেফারেন্সের শুনানিও শুরু হবে একই বেঞ্চে। দেশের ইতিহাসে বিচারিক আদালতে স্বল্প সময়ে বিচার নিশ্চিত হওয়ার পর হাইকোর্টেও দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয় শিশু রাজন ও রাকিব হত্যা মামলার। এ দু’টির সঙ্গে যোগ হয় ঐশীর মামলাটিও। তিনটি মামলায়ই মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হওয়ার পর দ্রুততম সময়েই ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকাভূক্ত হয়। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে গত বছরের ৩১ অক্টোবরের কার্যতালিকায় মামলাগুলো তালিকাভূক্ত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে শুনানির দিন ধার্য করছেন উচ্চ আদালত। ২০১৫ সালের ০৮ জুলাই সিলেটে চুরির অপবাদ দিয়ে শিশু সামিউল আলম রাজনকে এবং ০৩ আগস্ট খুলনায় দোকানে কাজ করতে রাজি না হওয়ায় শিশু রাকিব হাওলাদারকে নির্মম নির্যাতনে হত্যা করা হয়। খুব অল্প সময়ে বিচারকাজ শেষে একই বছরের ০৮ নভেম্বর একই দিনে এ দুই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত।
< Prev | Next > |
---|