স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা:Â সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন ও তারেক সাঈদ মোহাম্মদ হাই কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে তাদের আইনজীবীরা জানিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সময়ের স্থানীয় নেতা নূর হোসেন ২০১৪ সালে ওই হত্যাকা-ের সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ছিলেন। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ছিলেন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ওই সময় নারায়ণগঞ্জে র্যাব-১১ এর অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
নূর হোসেন, তারেক সাঈদসহ এ মামলার ২৬ আসামিকে গতকাল সোমবার মৃত্যুদ- দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত। মামলার বাকি নয় আসামিকে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ-। রায়ের পর আসামি নূর হোসেন ও তার সহযোগী মিজানুর রহমান দিপুর আইনজীবী খোকন সাহা সাংবাদিকদের বলেন, আমার মক্কেলরা মনে করে, এটা তাদের বক্তব্য, আমাদের বক্তব্য না, তারা মনে করেন, তারা ঘটনার সাথে জড়িত না। সঠিক বিচার পায় নাই। তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। এটা হচ্ছে আমাদের মক্কেলের পক্ষে আমাদের বক্তব্য। তারেক সাঈদের বাবা মুজিবুর রহমান ও মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আরেক সাবেক র্যাব কর্মকর্তা এম এম রানার শাশুড়ি সুলতানা রহমান শিল্পী রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাদের আইনজীবীরা আপিল করার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
তারেক সাঈদের আইনজীবী সুলতানুজ্জামান বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। হাই কোর্টে আপিল করব, আশা করি প্রতিকার পাব। তিনি বলেন, ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দেওয়া হয়েয়েছে তা ইনকালপিটরি নয়, এক্সকালপিটরি ইন নেচার। এর ওপর নির্ভর করে পূর্ণাঙ্গ শাস্তি দেওয়া যুক্তিযুক্ত বলে আমরা মনে করি না। তারেক সাঈদের আরেক আইনজীবী শাহাবুদ্দিন বলেন, আবেগতাড়িত হয়ে রায় দিয়েছে। কোনো ধরনের প্রমাণ আদালতে হাজির করতে পারেনি। পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট দিলেই তো হবে না, সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। তারিক সাঈদ (হত্যার) নির্দেশ দিয়েছে এ ধরনের কোনো কাগজপত্র বাদীপক্ষ আদালতে হাজির করতে পারেনি। বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানার আইনজীবী অন্যতম রিতা ইসলামও উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা সাংবাদিকদের বলেছেন।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে আরেক র্যাব কর্মকর্তা বরখাস্ত মেজর আরিফকেও মৃত্যুদ- দিয়েছে আদালত। তার হয়ে এ মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবীর এম এ রশিদ ভূইয়া। রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিজ্ঞ বিচারক বিচারিক বিবেচনায় এ রায় দিয়েছেন। আসামিপক্ষ যদি এ রায় ও দ-াদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হন, তারা আপিল করতে পারবেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপিল করলে আসামিপক্ষ সুফল পাবেন। এই রায়ে সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট- তা বলব না। এ বিষয়ে আসামি বলবেন। আপিল করলেও সেটা তিনিই করবেন। রায়ের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তবে দুই মামলায় ন্যায়বিচার পাননি বলে দাবি করেছেন এ দুই মামলার প্রধান আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন। গতকাল সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন রায় ঘোষণার পর আইনজীবীর মাধ্যমে এ প্রতিক্রিয়া জানান নূর হোসেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের নূর হোসেনের এ প্রতিক্রিয়ার কথা জানান তাঁর আইনজীবী এম এ রশীদ ভূঁইয়া।
আইনজীবী জানান, নূর হোসেন বলেছেন, আদালত দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী এ রায় দিয়েছেন। তাতে তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন নূর হোসেন। সেখান থেকে খালাস পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। সকালে আদালতে হাজির করার সময় প্রধান আসামি নূর হোসেন ও তারেক সাঈদ বেশ হাসিখুশি ছিলেন। এজলাসেও এ দুই আসামিকে বেশ নির্ভার দেখা যায়। তবে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফাঁসির রায় ঘোষণার পর নূর হোসেন ও তারেক সাঈদকে বেশ বিচলিত দেখা যায়। এ ছাড়া এজলাসের সামনে লোহার খাঁচায় অবস্থান করা ২৩ আসামির মধ্যে তিনজন রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। রায় পড়ার পুরো সময় নূর হোসেন ও তারেক সাঈদকে হাসিখুশি দেখা যায়। তবে রায় ঘোষণার পরপরই কিছুটা বিচলিত দেখা যায় তাঁদের।
< Prev | Next > |
---|