স্টাফ রিপোর্টার: নানামুখী উদ্যোগ নিয়েও রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) আয় বাড়াতে পারছে না। বরং ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ব্যয়ের পরিমাণ। অথচ বিআরটিসি বহরে বছর বছর নতুন বাস যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনায় যানবাহনপ্রতি গড় আয় বাড়ছে না। বর্তমানে বিআরটিসির দুটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেগুলোর মেয়াদ শেষ হবে চলতি অর্থবছর। ওসব প্রকল্পের আওতায় বিআরটিসির জন্য দ্বিতল, একতল এসি ও নন-এসি ৬০০ বাস কেনা হবে। অন্যটি হলো বিআরটিসির জন্য ৫০০ ট্রাক সংগ্রহ প্রকল্প। বিআরটিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিআরটিসি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয় করেছে ১৭২ কোটি টাকা। তার বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ১৭৮ কোটি টাকা। ওই হিসাবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্তই ৬ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনেছে বিআরটিসি। অর্থবছরের পুরো সময়ে লোকসানের পরিমাণ আরো বেশি হবে। তাছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে করপোরেশনের আয় হয় ২২৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তার বিপরীতে ওই অর্থবছরে পরিচালন ব্যয় হয় ২৫৮ কোটি টাকা। যদিও তার আগের অর্থবছর (২০১৪-১৫) আয়ের তুলনায় বিআরটিসির পরিচালন ব্যয় কিছুটা কম ছিল। ওই অর্থবছরটিতে ২৩৪ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে সংস্থাটির পরিচালন ব্যয় ছিল ২৩০ কোটি টাকা। বর্তমানে বিআরটিসির গাড়িবহরে যানবাহন রয়েছে ১ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে এক হাজার গাড়ি চলমান রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকায় চলছে ৪০০টি ও ঢাকার বাইরে ৬০০টি।
সূত্র জানায়, প্রতি মাসে যানবাহন থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও মেইনটেন্যান্স ব্যয় করতে হয়। বেসরকারি বাস মালিকরা সরকারি জায়গায় গাড়ি রেখে ব্যবসা করে। আর বিআরটিসির গাড়ি রাখার জন্য আলাদা ডিপোর দরকার হয়। সেখানেও খরচ হচ্ছে। ওসব কারণেই বিআরটিসি পরিচালন ব্যয় বেশি হয়। তাছাড়া নারীদের জন্য ১৮টা বাস রয়েছে, যেখান থেকে কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না। স্কুলের শিশুদের জন্যও রয়েছে দুটি বাস। ওসব কারণেই সংস্থাটি লোকসানে চলে।
সূত্র আরো জানায়, ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির একটি উপকমিটি বিআরটিসির মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন ডিপোর বেশকিছু অনিয়মের প্রমাণ উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চালু গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে ডিপোতে পড়ে আছে এমন অচল গাড়ি থেকে যন্ত্রাংশ নিয়ে লাগানো হয়। তারপরও ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। প্রতিটি ডিপোতে বড় অংকের অজমাকৃত অর্থ রয়েছে। ওই টাকা আদায়ে আরো তৎপর হওয়া উচিত। অজমাকৃত টাকা, সে সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক ও দায়ী ব্যক্তিদের বেতন-ভাতা, পেনশন ও গ্র্যাচুইটি থেকে কেটে রাখা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত বলেও সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বড় অংকের অর্থ অনাদায়ী থাকার কারণ হিসেবে বিআরটিসির তদারকির অভাবকে দায়ী করা হয়। সেজন্য কর্তৃপক্ষের তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
এদিকে চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান জানান, বিআরটিসি লাভজনক করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে গাড়ি ক্রয়ের একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কেনা সম্ভব হয়নি। স্ট্যান্ডার্ড কিছু গাড়ি আছে, সেগুলো কিনতে পারলে এ খাত বেশ লাভজনক হবে। দ্বিতীয়ত. শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
< Prev | Next > |
---|