স্টাফ রিপোর্টার: মাদক পাচারের নিরাপদ বাহনে পরিণত হয়েছে ট্রেন। মূলত রেলওয়ে পুলিশের জনবল সঙ্কটে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ট্রেন ও যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি রেলওয়ে পুলিশের জনবল। ফলে মাদক নিয়ন্ত্রণে রেলওয়ে পুলিশ নিয়মিতভাবে ট্রেনে অভিযান চালাতে পারছে না। আর ওই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। ফলে বেড়ে গেছে ট্রেনে মাদক পাচার। গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ৫০ লাখ টাকার হেরোইনসহ এক নারী আটক করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী স্বীকার করেছে যে সড়কপথে মাদক বহন ঝুঁকিপূর্ণ হলেও রেলওয়েতে ঝুঁকি অনেক কম। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাদক পাচারকারীরা মাদক পরিবহনে সড়কপথের চেয়ে রেলপথকেই বেশি নিরাপদ মনে করছে। ফলে ট্রেনে কওে চট্টগ্রাম থেকে আসছে ইয়াবার চালান, সিলেট ও রাজশাহী অঞ্চল থেকে আসছে ফেনসিডিল ও গাঁজার চালান। আর ওসব চালান নামছে গাজীপুর ও টঙ্গি স্টেশনে। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সংশ্লিষ্টদেও পক্ষে ট্রেনে অভিযান চালানো খুব একটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাঝে মধ্যে আমরা বিমান বন্দর স্টেশন থেকে শুরু করে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত অভিযান চালাই। তবে সে ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে। পাশাপাশি জনবল সঙ্কটের কারণে রেলওয়ে পুলিশও ট্রেনে নিয়মিত অভিযান চালাতে পারছে না। ফলে ট্রেন এখন মাদক চোরাকারবারিদের নিরাপদ বাহনে পরিণত হয়েছে।
সূত্র জানায়, সারাদেশে রেলওয়ের ৪৪৩টি স্টেশন আর ২৮০৭ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। কিন্তু রেলপুলিশের জনবল মাত্র ১ হাজার ৬০৪ জন। তাছাড়া গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেনের সংখ্যা ১০টিরও বেশি বেড়েছে। কিন্তু পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় কোনো লোকাল ট্রেনেই পুলিশ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর আন্তঃনগর ট্রেনেও প্রয়োজনের তুলনায় কমসংখ্যক পুলিশ ডিউটি করছে। পরিস্থিতি সামাল দিকে রেলওয়ে পুলিশ সদস্যদের টানা ২৪ ঘণ্টাও ডিউটি করতে হয়। যদিও রেলওয়ে পুলিশে আরো ৭৮১ জনের মঞ্জুরি হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই জনবল পাওয়া যায়নি। তাছাড়া রেলপুলিশের থানা ও ফাঁড়িগুলো দীর্ঘ দিনের পুরনো। অধিকাংশ ভবনের পলেস্তেরা খসে পড়েছে। কর্মকর্তাদের বসার মতো ভাল কোনো ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি নিয়ে রেলকর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে রেল পুলিশের দুটি জোন রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর জোন। ওই দুটি জোনে দু’জন পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করছে। চট্টগ্রাম জোনে ১২ রেলওয়ে থানা, ১৭টি ফাঁড়ি ও ৪টি সার্কেল রয়েছে। আর সৈয়দপুর জোনে ১২ থানা, ১৭টি ফাঁড়ি এবং ৪টি সার্কেল রয়েছে। একজন ডিআইজির নেতৃত্বে রেল পুলিশ পরিচালিত হচ্ছে। আর ১১৯ কিলোমিটার রেলপথের জন্য রয়েছে একটি থানা। তবে রেলপুলিশের পাশাপাশি রেলওয়ে বিভাগে রেলের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও (আরএনবি) রয়েছে। তাদের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। তবে আরএনবি সদস্যরা ট্রেনে কোনো ডিউটি করে না। তারা রেলের গুদাম ও রেলের নিজস্ব স্থাপনার নিরাপত্তায় কাজ করে। আর রেলওয়ে পুলিশ ট্রেনের চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে কাজ করে। পাশাপাশি লাশ উদ্ধার ও রেলযাত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। ফলে অপরাধ দমন, মামলা তদন্তের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক রেলযাত্রীর নিরাপত্তায় নিশ্চিত করতে রেল পুলিশকে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী গত ১০ ফেব্রুয়ারি ৫০ লাখ টাকার হেরোইনসহ কমলাপুর রেলস্টেশনে এক নারী পাচারকারীদে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার ভোরে রাজশাহী থেকে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসা ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে প্রায় ৬শ’ গ্রাম হেরোইনসহ হেরোইন সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত সুফিয়া ফোদনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত নারী হেরোইন চোরাকারবারী সুফিয়া দীর্ঘদিন ধরে রেলপথে চোরাকারবার করে আসছিল। তাছাড়া রাজশাহী ও পঞ্চগড় সীমান্ত এলাকা হয়ে আসা বিভিন্ন ট্রেনে হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক আসছে রাজধানীতে। মহিলা চোরাকারবারীরা ট্রেন যাত্রীবেশে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা করে আসে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি মো. ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, গ্রেফতারকৃত হেরোইন চোরাকারবারী সুফিয়া রেলপথে হেরোইন সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ডে এনে রেলপথে হেরোইন চোরাকারবারীদের মূল হোতাদের আটক করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রেলপুলিশের ওই কর্মকর্তা লোকবল সঙ্কটের কারণে ট্রেনে নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলেও স্বীকার করেন।
অন্যদিকে ট্রেনে মাদক পাচার প্রসঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।
< Prev | Next > |
---|