fdhdd2স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিবেশী দেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে সরকার দেশের ৪টি স্থলবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ওই স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। স্থলবন্দরগুলো হচ্ছে সিলেটের শেওলা, সাতক্ষীরার ভোমরা, যশোরের বেনাপোল ও খাগড়াছড়ির রামগড়। বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ওসব স্থলবন্দরের উন্নয়নে মোট ব্যয় হবে ৫৯৬ কোটি টাকা। সংস্থাটি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৪৩৩ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে। বাকি ১৬৩ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট ঃ শেওলা, ভোমরা, রামগড় স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশন নৌমন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন করেছে। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। আর একনেকের অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, নৌমন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ২০১৫ সালে শেওলা স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ভারতের অংশে তার নাম সুতারকান্দি স্থলবন্দর। বন্দরটির মাধ্যমে ভারতের আসামের সাথে বাণিজ্য স্থাপন সম্ভব। আর ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে সাতক্ষীরা হয়ে ভারতের কলকাতার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়। প্রকল্পের আওতায় ওই বন্দরের উন্মুক্ত ইয়ার্ডের (ওপেন ইয়ার্ড) উন্নয়নে কাজ করা হবে। তাছাড়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের ৪০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তাছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড় বন্দর উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য আরো বাড়বে। ওই বন্দরটির উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরটি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী করার কথাও ভাবছে সরকার।

সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৪ হাজার ৯৫ কিলোমিটার, মিয়ানমারের সাথে ২৫৬ কিলোমিটার এবং উপকূলীয় এলাকায় ৫৮০ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমারেখা রয়েছে। ওসব সীমারেখার মধ্যে অনেক স্থলবন্দর রয়েছে যেখান দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। তাছাড়াও প্রতিনিয়ত অনেক পর্যটক স্থলবন্দর দিয়ে চলাচল করে। তার মধ্যে শেওলা ভোমরা, রামগড় ও বেনাপোল অন্যতম। চারটি স্থলবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে প্রকল্পের আওতায় ৪২ দশমিক ৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১০ হাজার ৬২০ মিটার সীমানা উন্নয়ন, ৬২ হাজার ২১৫ বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মাণ, ৪০ হাজার বর্গমিটার রাস্তা ও ইয়ার্ড নির্মাণ, ৯ হাজার ৭০০ বর্গমিটার ট্রান্সশিপমেন্ট শেড নির্মাণ, ৩ হাজার ৩২৪ বর্গমিটার যাত্রী শেড নির্মাণসহ বেশ কিছু কাজ করা হবে। পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে বেনাপোল স্থলবন্দর উন্নয়নে সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রকল্প নামে বেনাপোল ও বুড়িমারী বন্দর উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্পও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

এদিকে স্থলবন্দও উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এশিয়ার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো পণ্য ও সেবার বহুমুখী সীমান্ত বাণিজ্য, বিনিয়োগ প্রবাহ ও মানবিক সংযোগের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার সুযোগ পায়। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পেলেও ভারতের সাথে বিরাট অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ভারতের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ওই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশ ভারতের নিকট গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করতে পারে। আর ট্রানজিট ফি এবং পরিবহন চার্জ আদায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশও ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারে। সংযোগ উন্নয়নের মাধ্যমে উভয় দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে পারে। গত অর্থবছর শুধুমাত্র ভারতের সাথেই বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৫০ কোটি ডলার।

অন্যদিকে পরিকল্পনা কমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অনেক দিন ধরেই প্রতিবেশী দেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সংশ্লিষ্টরা দেশের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নের তাগিদ দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের রফতানি আয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কিন্তু একই সাথে বাড়ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও। বিদ্যমান স্থলবন্দরগুলোর সীমিত সক্ষমতাই তার অন্যতম কারণ।

সাম্প্রতিক