ঢাকা : বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রোববার বুয়েট মিলনায়তনে ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী বর্ধিত অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। ঈদের পর খালেদা জিয়ার আন্দোলনের আশার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করবে এটা যদি সত্য হয়, তা আরব্য রজনীর রূপকথাতেও হয় না। বিএনপির আন্দোলনের আট বছরে ঈদের পর, কোরবানির ঈদের পর, এসএসসি পরীক্ষার পর বলেই আসছে। আমরা জানতে চাই, এইবারের আন্দোলন কোন ঈদের পর হবে? আর সেটা কোন বছর? দশম সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার পরের বছর ২০১৫ সালে সরকারের পতন ঘটাতে আন্দোলনে নেমে আবার ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি। তখন থেকে বিএনপির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন ওবায়দুল কাদের।
গত শনিবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ অস্থির হয়ে পড়েছে। রোজার পরে জনগণ নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
কাদের বলেন, পত্র-পত্রিকায় দেখলাম, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন,‘হাসিনা মার্কা’ নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আমি আপনাকে(খালেদা জিয়া) বলতে চাই, আপনি মনে হয় ইতিহাস ভুলে গেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের পটভূমি তৈরি করে কে অন্ধকারের দিকে জাতিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল? তারও আগে কেন ১৫ফেব্রুয়ারি নির্বাচন সৃষ্টি করেছিলেন? আওয়ামী লীগকে ফাঁকা বুলি দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। সেই দিন চলে গেছে, খালেদা মার্কা ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের দিন শেষ হয়ে গেছে। ঢাকা-১০, মাগুরা মার্কা নির্বাচনের দিন শেষ, বলেন তিনি। নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের বক্তব্যের সমালোচনায় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যে সকল কূটনীতিকরা আমাদের দেশের আগামি নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, নিজ নিজ দেশের চেহারাটা আগে দেখুন, আয়নায় নিজেদের দেখুন, নিজ দেশ নিয়ে মাথা ঘামান। বিএনপির নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকারের’ বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে সহায়ক সরকারের বিধান নাই। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশে একইভাবে নির্বাচন হবে। আর এ্ নিয়ে বিএনপি নেত্রী উদ্ভট দাবি করে আসছে। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ‘অপকর্ম’ থেকে দূরে রাখতে টাকা, চাকরি- যা দরকার তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠন যাতে কারও ‘স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার’ না হয়, সে বিষয়েও তিনি সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেন, তোমরা অপকর্মে লিপ্ত হবা না। টাকার দরকার হলে আমার কাছে এসো। যখন ছাত্রত্ব শেষ করবে, চাকরি দরকার, আমার কাছে আসবে। এটা নেত্রী আমাকে বলে দিয়েছেন। এমন কিছু করবে না যাতে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তবে ক্ষমতাসীন দল করলেই যে চাকরি হবে- সে নিশ্চয়তা নেই বলেও মন্তব্য করেন সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের। রিটেনে (লিখিত পরীক্ষা) টিকবে, তারপর। নিয়মমত আমি প্রত্যেকের জন্য চেষ্টা করব। টেন্ডার নিয়ে ছাত্ররা ‘মারামারি করে’ মন্তব্য করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের দরপ্রস্তাবে ই-টেন্ডারিং চালু করতে বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা টেন্ডার খেলায় মেতে উঠেছেন। আর এই টেন্ডার নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে মারামারি হয়। এখনো কেন আপনারা এনালগে আছেন? কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব টেন্ডারের জন্য দয়া করে ই-টেন্ডার সিস্টেম চালু করুন। ছাত্রলীগের পদ ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ‘অশুভ খেলায়’ মেতে উঠেছেন বলেও মন্তব্য করেন কাদের। নিজের দল ভারী করার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, এমপি মন্ত্রীরা ছাত্রলীগের শেয়ার দাবি করলে সেটা দেওয়া যাবে না। স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার কেন হবে ছাত্রলীগ? এই অশুভ খেলায় আজ বহু জায়গায় ছাত্রনেতারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের বাসার ড্রয়িং রুমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি ছাত্রলীগ করবে, সম্মেলনের পর কমিটি নিয়ে ঢাকায় আসা যাবে না। বিলম্বিত কমিটি অযোগ্যদের সুবিধা করে দেয়। ছাত্রলীগের কমিটি ছাত্রলীগ দেবে। নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরোধিতায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সরব হওয়ার আহ্বান জানান কাদের। তিনি বলেন, গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত অপপ্রচার রোধ করতে ছাত্রলীগকে একটা করে ফেইসবুক গ্রুপ তৈরি করতে হবে। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের উদ্দেশে সাবেক এই সভাপাতি বলেন, মিছিলে না এলে হলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সিট বাতিল করবে, এটা চলবে না। তাদের বোঝাবে, তোমার ভালো আচরণ দিয়ে তাদের বোঝাবে। জোর করে ক্ষমতার দাপট দেখাবে না। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী পান্না, সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
< Prev | Next > |
---|