স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আগামী সংসদ নির্বাচনের বাইরে রাখতে বাধ্য করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদের ১৮তম শাহদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাঙালির জাঁতি রাষ্ট্র গঠনে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের ভূমিকা ও কাজী আরেফ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বিএনপিকে সন্ত্রাসী কর্মকা- ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি হলো জঙ্গিদের তা দেওয়ার যন্ত্র। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের তা দেওয়ার যন্ত্র ছেড়ে দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। এটাই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক। তিনি বলেন, বিএনপি নামক একটি রাজনৈতিক দলের কারণে দেশে জঙ্গিরা তৈরি হচ্ছে। আর খালেদা জিয়া সরাসরি জঙ্গিবাদের আশ্রয়-প্রশয়দাতা। এগিয়ে যেতে হলে আমাদের জঙ্গি, যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইনু। মন্ত্রী বলেন, বহু মিটমাটের চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু শেখ হাসিনা আপস করেননি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনে কোনো আপোষের জায়গা নেই। এখনও বিচারকাজ চলছে।
জঙ্গিদের খুঁটিগুলোকে আমরা নির্মূল করছি। জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের একচুল ছাড় নেই। বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখতে হলে নির্বাচন করতে হবে উল্লেখ করে ইনু বলেন, আমি আরেফ ভাইয়ের নীতিতে বিশ্বাস করি। তার নীতি অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করলেই তার আত্মা শান্তি পাবে। অনুষ্ঠানে কাজী আরেফের স্মৃতিচারণ করে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আমার এখনও মনে আছে কাজী ভাইয়ের চিন্তাটাই ছিলো বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সংগঠিত করা। আজকে সেই শক্তি সংগঠিত হয়েছে। কাজী আরেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মাসুদ আহম্মেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এম এ ভাসানী প্রমুখ। এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ‘ইনকিউবেটর’ (তাপ দেওয়ার যন্ত্র) আখ্যায়িত করে তাকে ছেড়ে দলটিকে আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। দেশে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের জন্য খালেদা জিয়ার স্বামী সামরিক বাহিনী থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ একাংশের এই সভাপতি।
গতকাল বুধবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় জঙ্গি, রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ইনু বলেন, জেনারেল জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার স্বামী সামরিক জান্তা, তিনি গর্ত থেকে জঙ্গি এবং রাজাকারের সাপগুলোকে বের করে এনে তা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছেড়ে দেয়েছেন। জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক চক্র হচ্ছে সেই চক্র, যা গর্ত থেকে রাজাকারদের এবং জঙ্গি সাপদের তা (তাপ) দিয়ে দিয়ে বাচ্চা ফুটায়; যার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিবাদের উত্থান দেখছি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত এই সভায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে সামরিক চক্রের অনুপস্থিতিতে বিএনপি এবং তার নেত্রী খালেদা জিয়া মূলত জঙ্গি-সন্ত্রাস ও রাজাকারের তা (তাপ) দেওয়ার যন্ত্র, যাকে ইংরেজিতে বলে ইনকিউবিটর; অর্থাৎ এটা কৃত্রিমভাবে তা দিয়ে এই বাচ্চাগুলো ফুটাচ্ছে। সুতরাং বিএনপি এবং খালেদা জিয়া হচ্ছেন বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের তা দেওয়ার যন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদের ১৮তম মৃত্যু দিবস উপলক্ষে ‘বাঙালি জাতিরাষ্ট্র গঠনে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের ভূমিকা ও কাজী আরেফ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘শহীদ কাজী আরেফ ফাউন্ডেশন’। সভায় তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, কাজী আরেফ সাহেব বলতেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে জঙ্গিবাদ যায় না; গণতন্ত্রের সঙ্গে রাজাকার যায় না, সাম্প্রদায়িকতা যায় না। শহীদ মাতা জাহানার ঈমামও একই তথ্য দিয়েছেন। সেখানে কোনো মিটমাটের জায়াগা নেই। যুদ্ধাপরাধের বিচারে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব কোনো আপস করেনি মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন জোটের শরীক দল জাসদ একাংশের এই সভাপতি। তিনি বলেন, এখন সামনে এক সমস্যা দেখা দিয়েছে, নির্বাচন সামনে, তাইলে নির্বাচন ও জঙ্গি-সন্ত্রাস। বিএনপি এবং জঙ্গি নেত্রী খালেদা জিয়ার পারস্পরিক সম্পর্ক কি হবে? এটা একটি জটিল অংক, জটিল সমস্যা। খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু সন্ত্রাসী ক্লাবেরও উনি নেত্রী, আগুন সন্ত্রাসের নেত্রী, উনি হত্যা-খুনের নেত্রী, উনি দুর্নীতির নেত্রী। খালেদা জিয়া ব্যক্তি হিসেবে সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দাবি করে ইনু বলেন, এই নেত্রী আর নির্বাচন, এই নেত্রী আর গণতন্ত্রের পারস্পরিক সম্পর্ক কি হবে? বাংলাদেশকে যদি টিকে থাকতে হয়, বাংলাদেশকে যদি সংবিধানের পথে চলতে হয়, তাহলে নির্বাচন সময়মত করতে হবে। কিন্তু সেই নির্বাচনে এই বিএনপির ভাগ্য কী হবে? এই জঙ্গি নেত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্য কী হবে? সেই রাজনীতির অংকটা আমাদের মিলাতে হবে। আমাদের দুটো কর্তব্য, জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশও করতে হবে, নির্বাচনও করতে হবে। দুটো কাজই করতে হবে। সেখানে আমি কাজী আরেফ ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, আরেফ ভাইয়ের নীতিতে বিশ্বাস করি, আমি বলব নির্বাচনও হবে, কিন্তু জঙ্গি এবং জঙ্গির সঙ্গীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে জঙ্গি-সন্ত্রাসের তা দেবার যন্ত্র (খালেদা জিয়া) ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপিকে নির্বাচনেও আসতে হবে, জঙ্গি-সন্ত্রাসের তা দেবার যন্ত্রটাও ছেড়ে দিতে হবে। এটাই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক। অনুষ্ঠানে কাজী আরেফ আহমেদ সম্পর্কে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ অন্যান্য নেতার মতো মঞ্চের বিশাল নেতা ছিলেন না। কিন্তু মঞ্চ তৈরি করার জন্য, বক্তা সৃষ্টি করার জন্য, একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার সেই কাজগুলো করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে কাজী আরেফের চিন্তা ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সংগঠিত করা। আজকে সেই শক্তি সংগঠিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত মিলে এই দেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে দাবি করে তার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছিল জাসদের সাবেক সভাপতি কাজী আরেফকে। কাজী আরেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মাসুদ আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে এম এ ভাষানী, এম এ জলিল, মইনুল ইসলাম ময়না, হেনা খন্দকার, কবির চৌধুরী তন্ময় কাজী আরেফের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন।
< Prev | Next > |
---|