স্টাফ রিপোর্টার: জ্বালানি তেল বিক্রিতে সরকারের পোয়াবারো। বছরে মুনাফা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিলে দেশের বাজারে দাম কিছুটা কমানো এবং সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা বাড়ার পরও জ্বালানি তেলে বিপুল মুনাফা করছে সরকার। বর্তমানে প্রতি লিটার অকটেনে ৩০ টাকা, পেট্রলে ২৫, ডিজেল, কেরোসিনে ২৫ এবং ফার্নেস অয়েলে অন্তত ১৫ টাকা করে মুনাফা হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।Â
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৫৩ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে ডিজেলের পরিমাণই প্রায় ৩৭ লাখ টন আর ফার্নেস অয়েল ৭ লাখ টনের বেশি। তাছাড়া কেরোসিন ব্যবহার হয় ২ লাখ টনের বেশি। আর অকটেন প্রায় দেড় লাখ টন এবং পেট্রল দেড় লাখ টনের মতো। অবশিষ্ট ৪ লাখ টনের অধিকাংশ বিমানের জ্বালানি (জেট ফুয়েল)। তার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অয়েলসহ আরো বেশ কয়েক ধরনের তেল রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরেই অকটেন ও পেট্রল আমদানি করতে হয় না। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত হিসেবে পাওয়া কনডেনসেট সরকারি-বেসরকারি শোধনাগারে (রিফাইনারি) পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ করে দেশের পুরো চাহিদা পূরণের অকটেন ও পেট্রল তৈরি করা হচ্ছে। আর দেশের জ্বালানি সম্পদ ব্যবহার করেই অকটেন ও পেট্রল তৈরি হচ্ছে বলে ওই খাতে সরকারের অনেক বেশি মুনাফা হচ্ছে। বছরে শুধুমাত্র ৩ লাখ টন অকটেন-পেট্রল বিক্রি করে সরকার ট্যাক্স-ভ্যাট নেয়া ছাড়াই মুনাফা করছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া ডিজেলের ব্যবহার বেশি হওয়ায় ওই খাতেও সরকারের মুনাফা বেশি। চলতি বছর ডিজেল থেকেই বাংলাদেশ পেট্রোলিযাম কর্পোরেশনের (বিপিসি) মুনাফা হতে পারে ৮ হাজার কোটি টাকা। তবে ডিজেলের দাম কমালেও পরিবহন খাতে ভাড়া কমার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। সেজন্য সরকারও ডিজেলের দাম কমানোর ব্যাপারে আগ্রহী নয়। আর কৃষি খাতে সরকার ভর্তুকি দিয়ে বেশি দামের বিষয়টি সমন্বয়ের চেষ্টা করে। তাছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে ফার্নেস অয়েলের প্রায় সবটাই। যদিও ফার্নেস অয়েলের দাম বেশি নির্ধারণ করায় সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। ফার্নেস অয়েল থেকে ট্যাক্স-ভ্যাট ছাড়াও সরকার বর্তমান মূল্য হারে বছরে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করছে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১২০ মার্কিন ডলার। তবে ২০১৪ সালের জুন থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে তা ব্যারেলপ্রতি ২৫ ডলারে নেমে আসে। গতবছরের এপ্রিলে সরকার জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমায়। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেলের দাম ৪০ ডলারের কাছাকাছি ছিল। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৫৫ ডলারে উঠেছে। তবে দেশি-বিদেশি গবেষক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস হচ্ছে আগামী দু-তিন বছর জ্বালানি তেলের দাম ৬০ ডলারের বেশি ওঠার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে ভোক্তাস্বার্থ প্রতিষ্ঠান কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলমের মতে, বর্তমানে সাধারণ গ্রাহকরা জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎতের কম দামের সুবিধা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকদের কম দামে জ্বালানি তেল পাওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। কিন্তু সরকার যদি জ্বালানি তেলের দাম না কমিয়ে মুনাফা অব্যাহত রাখতে চায় তাহলে ওই মুনাফার টাকা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় করে বিদ্যুতের দাম কমিয়ে তা করা যেতে পারে। সরকার ২০১০ সালে ওই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাছাড়া শিল্পে জ্বালানি নিরাপত্তা ও এলপি গ্যাসে ভর্তুকির জন্যও জ্বালানি তেলের মুনাফার অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদেও মতে, গতবছর এপ্রিলে দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সময় সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে আরেক দফা দাম কমানো। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা ওঠা-নামার প্রবণতা দেখে সরকার তা করার সাহস পাচ্ছে না। সরকার চাইছে বাজারদর আরো বাড়লেও যাতে দেশে দাম বাড়াতে না হয়। আর মুনাফা যেটা হচ্ছে সেটা হতে থাকুক।
< Prev | Next > |
---|