xghgf7স্টাফ রিপোর্টার: ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রতিবেদনে ‘বাসযোগ্য শহর’ হিসেবে ঢাকাকে সর্বনিম্ন মান দেওয়ার যে অপবাদ, তা ঘুচাতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির যোগ ঘটানোর পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই ধরনের মন্তব্য করেছন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নগর গবেষণা কেন্দ্র’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে দাবি উঠে ঢাকাকে একটি সাংস্কৃতিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার। বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে গতকাল শনিবার দিনভর অনুষ্ঠিত হয় ‘সাংস্কৃতিক শহর ঢাকা’ শিরোনামে এই সেমিনার ও আলোচনা সভা। আলোচনা সভার প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর স্বীকার করেন, অধিকাংশ মানুষের জীবনে সংস্কৃতির চেতনা দিতে পারেননি তারা। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরের শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলোতে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের বদলে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মকা- চলে বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা অলিখিতভাবে নির্দেশনা দিয়েছি, যেসব সাংস্কৃতিক সংগঠন টাকা দিতে পারবে না তাদেরও হল বরাদ্দ দিতে। কিন্তু তারপরও কি আয়োজন হচ্ছে? সংস্কৃতি চর্চা ক্রম কমে যাচ্ছে। কিন্তু এই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রতি বছর বরাদ্দ নিতে আবেদন করে। কিন্তু সেভাবে তো সংস্কৃতি চর্চা করছে না তারা। সংস্কৃতি চর্চাকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে সরকারের নানামুখী প্রকল্প চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় একটি অডিটরিয়াম, মুক্ত মঞ্চ স্থাপনের পাশাপাশি সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে জনবল। তিনি বলেন, শুধু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আর সংস্কৃতিকর্মীরা নয়, ঢাকার সংস্কৃতির বিকাশে প্রয়োজন বহু মানুষের সংযুক্তি। না হলে ঢাকাকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সত্যিই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাশেম খান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। নগর গবেষণা কেন্দ্রের সাম্মানিক সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রের সাম্মানিক সচিব অধ্যাপক নুরুল ইসলাম নাজেম, সহ-সভাপতি অধ্যাপক রোজি মজিদ হাসান। ‘সাংস্কৃতিক শহর ঢাকা’ শিরোনামের প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইইউআই) এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তিনি বলেন, ইইউআই বাসযোগ্যতার মানদ-ে বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকা শহরকে চিহ্নিত করেছে একটি সর্বনিম্ন মানের শহর হিসেবে (বিশ্বের ১৪০টি শহরের মধ্যে)। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা ও ভৌত অবকাঠামোর সূচকে ঢাকাকে অতিশয় নিম্নমানের শহর বলছে তারা। এই র‌্যাংকিংয়ের সাথে আসলে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। তবে এ জরিপে ঢাকাবাসীর অনানুস্ঠানিক খাতে দক্ষতার বিষয়টিকে সংস্কৃতি ও পরিবেশ সূচকে বিবেচনায় আনা গেলে ঢাকাকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও বসবাসযোগ্য শহর মনে হবে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের ‘সংস্কৃতি ও পরিবেশ’ সূচকের নির্ণায়কগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘অনেকাংশেই বিবেচনা করা হয় না’ বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করেন তিনি। প্রবন্ধে তিনি নগরের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ‘প্রশংসনীয় নয়’ উল্লেখ করে বলেন, গণতান্ত্রিক নগর পরিচালনে নির্বাচিত নগর নেতৃত্বের সঙ্গে নাগরিকদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। নগর উন্নয়ন ও প্রশাসনে তাদের অংশগ্রহণ জরুরি। একই সঙ্গে বলতে হয়, ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় কোনো উন্নত সাংস্কৃতিক স্পেস নেই। নগর উন্নয়নে এলাকাভিত্তিক সাংস্কৃতিক বলয় বা কেন্দ্র পরিকল্পনার কোনো দৃষ্টান্ত নেই ঢাকা শহরে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও স্বাধীনতা স্তম্ভ নগর সংস্কৃতির ‘প্রাণকেন্দ্র’ হিসেবে বিকশিত হওয়ার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। পুরাতন বিমানবন্দর এলাকার খোলা অংশ, হাতিরঝিল, লালবাগ দুর্গ, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারকে সঠিক বিন্যাসের মাধ্যমে আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায় বলেও অভিমত দেন তিনি। চিত্রশিল্পী হাশেম খান বলেন, ঢাকা শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যের অধিকাংশই ইট, লোহার স্তুপ ব্যতিত কিছু নয়। ভাস্কর্যের নামে ওগুলো আসলে গাঁজাখুরি। এগুলোই আসলে মৌলবাদীদের উস্কে দিচ্ছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ‘মোদের গরব’ ভাস্কর্যটিরও সমালোচনা করেন তিনি। গ্রামীণফোন ও বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই ভাস্কর্যটি ‘নীতিমালা ও আইন মেনে করা হয়নি’ বলে তার অভিযোগ। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, সংস্কৃতির সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। রাজনীতিবিদরাও আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতির নানা উৎস না বুঝেই রাজনীতিতে আসছেন। এদের দিয়ে জনমুখী, কল্যাণধর্মী রাজনীতি হতে পারে না। এ মুহূর্তে তাই রাজনীতি ও সংস্কৃতির মধ্যে একটা সম্মিলিন হওয়া দরকার। দরকার গণতান্ত্রিক ও মানবিক বোধের সাংস্কৃতিক জাগরণ। ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করা নগর গবেষণা কেন্দ্র (সিইউএস) নগর বিষয়ক গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কয়েকটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সাম্প্রতিক