স্টাফ রিপোর্টার: হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠা চিনির বাজারে স্বস্তি ফিরলেও চালের দাম বাড়তেই আছে। সপ্তাহ খানেক আগে প্রতি কেজিতে ১০-১২ টাকা বেড়ে গেলেও এখন ৫৮ টাকা কেজিতেই বিক্রি হচ্ছে চিনি।
আসন্ন শবে বরাত ও রমজানে যাতে আরো কমে চিনি সরবরাহ করা যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে।
এদিকে, পাইকারি বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে যে গুটি স্বর্ণ চাল ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সপ্তাহের ব্যবধানে সেই চাল ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, আবহাওয়া ভালো না থাকলে চালের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আমদানির প্রয়োজন হতে পারে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর বাবু বাজার, যাত্রাবাড়ি এলাকায় চালের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে যে চাল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা খুচরা বাজারে সে চাল কৃত্রিম সংকটের গুজব ছড়িয়ে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, চিনি বাজারের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী মীর গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ এখন আর চাইলেই যে কাউকে চিনি দিচ্ছে না।
এজন্য মোবাইল নম্বর, দোকানের ঠিকানা, ট্রেড লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা নিয়ে তবেই চিনি ছাড়ছে এই দুই গ্রুপ। শুধু তাই নয়, ১০ থেকে ১৫ ডিলারকে মনোনীত করে প্রতিজনকে ১৬ মেট্রিক টনের এক গাড়ি করে চিনি দিয়ে বলে দিচ্ছে, নির্দিষ্ট দামেই চিনি বিক্রি করতে। এজন্য যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কেউ নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দামে চিনি বিক্রি না করলে তাকে আর চিনি দিচ্ছে না মীর আর এস আলম গ্রুপ। উপরন্তু নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করছে জেলা প্রশাসনে। বর্তমানে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২১৫৫ টাকা দরে। এ প্রসঙ্গে মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস ছালাম বলেন, চিনির বাজার এখন স্থিতিশীল। এরইমধ্যে দাম কমে গেছে অনেক। শবে বরাত আর রমজানে দাম যাতে আর না বাড়ে আমরা তার ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি বলেন, চিনির দাম মূলত বাড়ে বারবার হাতবদল হওয়ার কারণে। এটা যাতে না হয় তার সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে কেজি প্রতি চিনির যে ৬০ টাকা দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো, এখন তার চেয়েও ২ টাকা কমে চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে চিনির দাম আরো কমে যাবে।
এর আগে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে হুট করে বেড়ে যায় চিনির দাম। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যায় বাজারে। কিন্তু রমজানের বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে ৮ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি আমদানির পরও হঠাৎ সরবরাহ কমে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সরবরাহ কমিয়ে চিনির বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির অভিযোগ ওঠে খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় মীর গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ। মাত্র সপ্তাহ খানেকের মধ্যে হরিলুট ঠেকিয়ে চিনির বাজারকে স্থিতিশীল করে তোলে তারা। তাদের উদ্যোগ সাধারণ ভোক্তাদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। এদিকে, খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হওয়ায় চাল আসছে না। তাই চালের দাম বেড়েছে। কিন্তু পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। রাজধানীর পাইকারি বাজারে চালের মান ভেদে মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি (নতুন) ৪৯-৫১ টাকায় এবং (পুরোনো) ৫২-৫৩ টাকা দরে। আটাশ চাল ৪২-৪৮ টাকা দরে, স্বর্ণা গুটি ৪২-৪৫ ও সাদা স্বর্ণা ৩৯-৪১ টাকা দরে। হাসকি চাল ৪২-৫২, নাজিরশাইল ৪৮-৫৩, পারিজা ৪২-৪৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। এবং খুচরা দোকানে এসব চাল কেজি প্রতি আরো ৩-৭ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সমতা চাল এজেন্সি, বসুন্ধরা চাল এজেন্সি, হাজী চাল এজেন্সি, কাওরান বাজারে শরিয়তপুর চাল এজেন্সি, শিল্পী চাল এজেন্সিতেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। সাধারণত বাজারে নতুন চাল এলে চালের দর কমে যায়। সেটা না হয়ে উপরন্তু বেশি হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর বাবু বাজারের মেসার্স ফরিদ রাইস এজেন্সির স্বত্ত্বাধিকারী আবদুর রহিম বলেন, চালের দর বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবে নতুন চাল বাজারে এলে দর কমে যায়।
এখন দর কমছে তো না বরং দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তবে এর কারণ হলো অটো মিল থেকে চালের সাপ্লাই বন্ধ থাকা। এই ব্যবসায়ী আরো জানান, হাওর অঞ্চলে ফসলহানি হওয়ায় জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। হাওর অঞ্চলে ধান খেত ডুবে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ধান গুদামজাত করেছে। এখন তারা দর বৃদ্ধির আশায় বসে আছে। তারা রাইস মিলের কাছে ধান বিক্রি করছে না। ফলে রাইস মিলগুলোতে ধানের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। উৎপাদন না থাকায় অটো মালিকরা চালের সাপ্লাই বন্ধ রেখেছে। যার কারণে বাজারে কোনো চাল আসছে না। ধানের কৃত্রিম সংকট আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিন্না ব্যান্ড রাইস (চাতাল) মিলের স্বত্ত্বাধিকারী জিয়া বলেন, আবহাওয়া ভালো না থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়নি। এখন বাজারে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা বেশি। ব্যবসায়ীরা বেশি দর হাঁকছেন। প্রতিযোগিতা করে বেশি দরে ধান কিনতে হচ্ছে। ধানের দর বৃদ্ধি হওয়ায় পাইকারি বাজারে আমাদের মোটা (স্বর্ণা) চাল ৪২-৪৩ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। চিকন চালের দামতো আরো বেশি। সামনে চালের দাম আরো বাড়তে পারে। দাম না বাড়লেও কমবে না এটা নিশ্চিত। বাবু বাজারের আরেক চাল ব্যবসায়ী মেসার্স রাজিব এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ মিয়া বলেন, এখন যে সিজন, চালের দাম কমার কথা। কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা কমার পরিবর্তে দাম বেড়েছে। আমরা পাইকারী চাল ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দরে কিনছি। ফলে খুচরা বাজারে গিয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই সংকট চলে যাবে। এই বছর কোনো কোনো এলাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিছুদিন পর নতুন চাল এলে দর কমে যাবে।
< Prev | Next > |
---|