স্টাফ রিপোর্টার: দেশে আশঙ্কাজনক হারে কৃষি ঋণেও খেলাপির সংখ্যা বাড়ছে। অথচ বর্তমান পরিবেশে কৃষি খাতে খেলাপি বাড়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এ সময়ে দেশে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় রয়েছে। তারপরও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। মূলত ব্যাংকারদের ঋণ আদায় তৎপরতা কমে যাওয়াতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষিতে বকেয়া আদায় জোরদার করতে ব্যাংকগুলোর সাথে জরুরি বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে কর্মরত ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) কৃষি খাতে ১২ হাজার ১৫৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। যদিও চলতি অর্থবছরের জন্য কৃষি খাতে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। আর ওই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত ৭ মাসে ৬৯ দশমিক ২৮ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছে। তাছাড়া আগের অর্থবছরের একই সময়ে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮০ কোটি টাকা। যা ওই অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৬১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। তাতে আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ও লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হার উভয়ই বেড়েছে। তবে কৃষি ঋণে খেলাপির পরিমাণও বেড়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে কৃষি খাতে বিতরণ হওয়া ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। ওই হিসেবে কৃষি খাতে বিতরণ হওয়া মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা না থাকার পরও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বিগ্ন। কৃষি খাতের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে। ওই ব্যাংকের ঋণ স্থিতির পরিমাণ ১৩ হাজার ৯৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। যা কৃষি খাতে মোট খেলাপি ঋণের ২০ শতাংশ। তাছাড়া কৃষি খাতে সোনালী ব্যাংকে ১ হাজার ২৫৯ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৬০৫ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ১৯৪ কোটি, জনতা ব্যাংকে ২৬২ কোটি এবং রূপালী ব্যাংকে ২৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। আর কৃষি খাতে বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১২ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮০ কোটি টাকা।
সূত্র আরো জানায়, সারসহ কৃষি সরঞ্জামাদির দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা ঋণ ছাড়া চলতে পারছে না। তাই আমন চাষাবাদের সময় ব্যাংকগুলো কৃষকদের বেশি পরিমাণ অর্থ ছাড় করেছে। তাতে কৃষি ঋণের পরিমাণ ওই সময়ে বেড়েছে। তবে ফসল উৎপাদনের খরচের তুলনায় দাম কম পাওয়ায় কৃষকরা মুনাফা করতে পারছে না। ফলে কৃষকরা ঋণ করে ফসল ফলিয়েও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছর থেকে কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমানত ও ঋণের সুদহার কমে আসার প্রবণতা থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তার আগে ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর এক পরিপত্র জারি করে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারও আগে ছিল ১৩ শতাংশ। তাছাড়া মশলা জাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, আমন মৌসুমে কৃষক থেকে ঋণের চাহিদা বেশি হওয়ায় সার্বিক কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। আর বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় কৃষিঋণ বিতরণ আরো বাড়বে। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে ব্যাংকগুলো অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে না। আর সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে সুদহার কমে আসায় ব্যাংকগুলোও কৃষিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাতে ওই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ছে। মূলত কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তৎপরতা এবং ব্যাংকগুলোর উদ্যোগের কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ওই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর দেয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না হলে জরিমানারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওসব কারণেই কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। তবে কৃষি খাতে সার্বিক ঋণ বিতরণ বাড়লেও রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো ওই ঋণ বিতরণে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাছাড়া নতুন ব্যাংকগুলোও কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণে পিছিয়ে পড়ছে।
< Prev | Next > |
---|