f-miniস্টাফ রিপোর্টার: সহিংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল সামালানো নিয়ে সঙ্কটময় মুহূর্তে প্রতিবেশী ভারত ও চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশাবাদী পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানাতে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার দ্বিতীয় দফায় গতকাল সোমবার এশিয়ার কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক হয়।

দশকের পর দশক ধরে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে সম্প্রতি আরও তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগের রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আহ্বান জানিয়ে আসা হলেও তাতে কোনো গা করছিল না মিয়ানমার। নতুন করে শরণার্থীর ঢল নামার পর বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস দমনে সীমান্তে যৌথ অভিযান চালাতেও মিয়ানমারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের আচরণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ মন্তব্য করে দেশটিকে থামাতে চীন ও ভারতের দ্বারস্ত হতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, চীন ও ভারত আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ। এই দুঃখকালীন, কষ্টকালীন সময়েও তারা আমাদের পাশে থাকবে, আগে যেভাবে থেকেছে। এর আগেগত রোববার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের এই সঙ্কট সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করে দেওয়া কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার বিকেল রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় দক্ষিণ এশিয়া, আসিয়ান ও দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর কূটনীতিকদের ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের একথা বলেন।

তিনি বলেন,গত রোববার পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের ব্রিফ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তারই ধারাবাহিকতায় আজও তা করলেন। মিয়ানমারের কোনো প্রতিনিধিকে এ ব্রিফিংয়ে ডাকা হয়নি বলেও জানান সচিব। শহীদুল হক বলেন, কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের কতটুকু বাস্তবায়ন করা হবে এ নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে তার ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এ রিপোর্টের নিঃশর্ত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ। এ সঙ্কট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

ভারত ও চীন এই সঙ্কট সমাধানে আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়াও সব রকম সাহায্য দিতে চেয়েছে। শহীদুল হক বলেন, মিয়ানমারে অত্যাচার বন্ধ করতে বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার সঙ্গে আনান কমিশনের রিপোর্ট মেনে তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করেই নিজ দেশে নিরাপদে ফেরত পাঠাতে হবে। প্রতিনিধিরা বলেছেন, এই প্রতিবেদন বাস্তবায়িত হলে দূর হবে সমস্যা; নিজ দেশে নিরাপদে থাকতে পারবেন রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের হয়ে এতে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এ ব্রিফিংয়ে আফগানিস্তান, ব্রুনাই, চীন, ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়া,জাপান, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর,দক্ষিণ কোরিয়া,ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সাম্প্রতিক