স্টাফ রিপোর্টার: ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে কমলাপুর রেল স্টেশনে। গতকাল বুধবার কমলাপুরে দেখা যায় ভেতরে জায়গা পেয়ে অনেকে ট্রেনের ছাদে চড়ছেন। অনেকে ইঞ্জিনের সামনের অংশে বসে ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে আগের দুদিনের চেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে।
গত ২১ অগাস্ট যারা ঈদের আগাম টিকেট কিনেছিলেন, তারাই গতকাল বুধবার বাড়ির পথের ট্রেন ধরেছেন। এর বাইরে ‘সিটবিহীন টিকেটের’ যাত্রী আছে অসংখ্য। ভিড়ের এই চাপের পরও এবারের ঈদযাত্রাকে ‘স্বস্তিদায়ক’ বলছেন রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী আইয়ুব আলী। ট্রেনের টিকেট কেনার সময় ভিড় থাকলেও ট্রেনের ওঠার সময় সেই ভিড় ছিল না। খুব সুন্দরভাবে যেতে পারছি। এখনও কোনো কষ্ট হচ্ছে না। একটু দেরি হতে পারে, যাত্রী যেহেতু বেশি। কিন্তু আগের মতো ৩-৪ ঘণ্টা লেট হচ্ছে না। বাংলাদেশের মুসলমানরা কোরবানির ঈদ উদযাপন করবেন ২ সেপ্টেম্বর শনিবার।
তার আগে বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস শেষেই ঘরমুখো যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি চাপ থাকবে বলে রেল কর্মকর্তারা মনে করছেন। দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ট্রেনের যাত্রী সারোয়ার হোসেন বলেন, যাত্রাপথের কষ্ট বাড়ি পৌঁছানোর পর আর থাকে না। যাওয়ার সময় একটু কষ্ট হয়। কিন্তু বাসায় ঈদ করার একটা আনন্দ থাকে। সে কারণে কষ্টটা আর বেশি মনে থাকে না। গতকাল বুধবারও কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুর থেকে দেরি করে ছেড়েছে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি সকাল ৮ টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায়। ঢাকা-চিলাহাটি রুটের নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টার ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় ১০ টা ২০ মিনিটে। এছাড়া রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা এবং দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ১৫ মিনিট দেরিতে কমলাপুর ছেড়ে গেছে।
স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, গত মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১০টা পর্যন্ত মোট ২০টি ট্র্রেন যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে। যাত্রী চাপ আর কয়েকটি ট্রেন কমলাপুরে আসতে দেরি হওয়ায় কয়েকটি ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়েছে বলে সিতাংশু চক্রবর্তী জানান।
তিনি বলেন, ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। ট্রেনে উঠতেও সময় লাগে। নামতেও সময় লাগে। সুন্দরবন ট্রেনটি যাওয়ার পথে ২১টি স্টেশনে থামে। প্রতিটি স্টেশনেই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। তবে, ঈদের মাত্র দুইদিন বাকি থাকলেও রাজধানীর অন্যতম প্রবেশ পথ গাবতলী ও কল্যাণপুরে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা যায়নি।
যাত্রীর চাপ কম হওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে ঈদযাত্রা অনেকটা সুশৃঙ্খল ও ঝামেলামুক্তভাবে হচ্ছে বলে মনে করছেন কাউন্টার ব্যবস্থাপক ও কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার গাবতলী, শ্যামলী ও কল্যাণপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গের পথে অন্যবারের মতো এবার ঈদযাত্রায় ভিড় নেই।
মহাসড়কে বড় ধরনের যানজট না থাকায় গাড়িগুলোও ছেড়ে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ে। হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে অপেক্ষমাণ যাত্রী রাসেল জানান, বাবা-মা, বোনসহ তারা পরিবারের চার সদস্য ঈদ করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাচ্ছেন। সকাল ৯টায় নির্ধারিত সময়েই তাদের ভলভো বাস কাউন্টারে এসে হাজির হয়েছে। অন্য সময় টিকেটের মূল্য ১২শ টাকা হলেও এবার যেতে হচ্ছে জনপ্রতি ১৫শ টাকা খরচ করে। অবশ্য অতিরিক্ত এই ভাড়াকে অন্যায় বলতে নারাজ এই পরিবারের সব সদস্য। আমি মনে করি এটা যৌক্তিক। কারণ গাড়িটি আসার সময় প্রায় ফাঁকাই আসবে। ঈদযাত্রায় মানুষজন সব সময় একমুখী। তাই ভাড়া একটু বাড়তে পার, বলেন রাসেলের বাবা।
মহাসড়কে নতুন সার্ভিস অরিন পরিবহনের যাত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী পরিচয়ের কাছেও এবারের ঈদযাত্রা বেশ স্বস্তির।
তিনি বলেন, টেনশন থাকলেও ভোগান্তির মুখে পড়েননি তিনি। গাইবান্ধা যাওয়ার জন্য গত মঙ্গলবারই টিকেট কেটে গেছেন। সিট পড়েছে বাসের পেছনের অংশে। টিকেটের দাম ৮০ টাকা বেড়ে ৫২০ টাকা হয়েছে। কিন্তু গাড়ি ছেড়েছে সময় মতো। অরিন পরিবহনের ব্যবস্থাপক বাবুল প্রসাধ বালেন, ঈদে তাদের একটি এসি সার্ভিস ও তিনটি নন এসি সার্ভিস রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে যাচ্ছে।
নির্ধারিত সার্ভিসের অতিরিক্ত টিকেট তারা ছাড়েননি। যতটি বাস ততটি সার্ভিস। ফলে কোনো ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না। মহাসড়কেও যানজট পরিস্থিতি বেশ স্বস্তিদায়ক বলে জানান এই পরিবহনকর্মী। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে অগ্রিম কেনা চারটি টিকেটের মধ্যে দুটি ফেরত দিতে গিয়েছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ম্যাডিসন গ্রুপের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তুহিন। বাস ছাড়ার আগেই টিকেট পুনরায় বিক্রি হওয়া সাপেক্ষে ফেরত নিতে রাজি হয়েছেন কাউন্টারের কর্মীরা।
তবে দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও টিকেট বিক্রি না হওয়ায় কিছুটা চিন্তার ছাপ দেখা গেল তুহিনের মুখে। দুই ঘণ্টা পর বাস ছাড়বে। এখনও দুটো টিকেট বিক্রি করা যায়নি। অথচ গত ১৮ অগাস্ট লাইনে দাঁড়িয়ে বহুকষ্টে জে-সিরিজের চারটা টিকেট সংগ্রহ করেছিলাম। টিকেট বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তুহিন বলেন, ভাই ভাবীর জন্য দুটো টিকেট কিনেছিলাম। কিন্তু তাদের ছুটি আজ মেলেনি। তারা বৃহস্পতিবারে বাড়ি যাবেন। সেই টিকেটও আজকে পেয়েছি।
শনিবার বাংলাদেশে ঈদুল আজহা। ঈদের আগে পরে তিনদিন ছুটির মধ্যে দুইদিনই সরকারি ছুটি পড়েছে। ফলে কেবল রোববার ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ছুটি মিলছে এবার।
আব্দুর রহমান নামের একজন কাউন্টার ব্যবস্থাপক বলেন, গতবারের চেয়ে এবারে যাত্রীদের চাপ কম। মানুষজন অনেকে আগে ফ্যামিলি পাঠিয়ে দিয়েছেন। আবার ছুটি কম হওয়ায় অনেকে বাড়ি যাচ্ছেন না। অবশ্য এই পরিস্থিতিকে কাক্সিক্ষত বলতে চেয়েছেন কেয়া পরিবহনের যাত্রী সীমানা। তিনি বলেন, আজকে ভিড় না হলেও কালকে ঠিকই ভিড় পড়ে যাবে। দূরপাল্লার যাত্রা পরিকল্পিত ও ঝামেলামুক্ত হওয়াই উচিত।
ভিড়বাট্টা কৃত্রিম। টিকেটের দাম বাড়ানোর জন্য পরিবহনের লোকজন কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করলেই কেবল ভিড় হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তায় পুলিশের বসানো একটি তল্লাশি চৌকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার এসআই শঙকর বালা বলেন, সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত যাত্রীদের কোনো অভিযোগ পাননি তারা। অন্যবারের তুলনায় এবার ভিড়ও কিছুটা কম। লোকজন আগের চেয়ে সচেতন হয়ে পরিকল্পিতভাবে ঈদে বাড়ি ফেরায় ঝামেলা কমেছে বলে মনে করছেন তিনি। বরিশাল-বরগুনাগামী সোনারতরী পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক আলী হোসেন বলেন, রাস্তায় কিংবা ফেরিতে এবার এখনও কোনো ঝমেলা হয়নি। ফলে যাত্রীরা নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরতে পারছেন।
< Prev | Next > |
---|