আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বর্বরতার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়ে সম্মেলনের চেয়ারম্যানের বিবৃতির মুসাবিদা প্রস্তুত করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান। একই বিষয়ে আগের তুলনায় এবার তাদের অবস্থান শক্ত হতে যাচ্ছে বলে ওই মুসাবিদা পর্যালোচনা করে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খসড়ায় রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগের বিষয়’ হিসেবেও অভিহিত সাধন হয়েছে। আয়োজক দেশ সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোং এবারের সম্মেলনের চেয়ারম্যানের বিবৃতি দেবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপনের সামনে জোটভুক্ত ১০টি দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে রূদ্ধদ্বার বৈঠক হবে। মঙ্গলবারের ওই বৈঠকের পর মুসাবিদা বিবৃতিতে রদবদলও হতে পারে বলে সংবাদ রয়টার্সের। এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হাতোই-র কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানে গণহত্যা ও গণধর্ষণের বিস্তারিত জানিয়ে অগাস্টেই প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের একটি প্যানেল।
‘গণহত্যার উদ্দেশ্য থেকে’ সাধন ওই অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে ২০১৭-র অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ইন চিফ ও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ জেনারেলকে আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের মুখোমুখি করারও আহ্বান জানানো হয়েছিল। প্রতিবেদনটির বেশিরভাগ অভিযোগই অস্বীকার করেছিল মিয়ানমার। সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থতার দরুন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তুমুল সমালোচিত হয়েছিলেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে উক্তি না বলে মানবাধিকার লংঘনে সহায়তা করার অভিযোগে মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি সুচিকে দেওয়া তাদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারও প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
“মানবাধিকার লংঘন ও এ-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য মিয়ানমার সরকারকে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত জিনিস বিক্রয়ের সময়ে মূল্যে ছাড় দেওয়া গঠন ও দায়ীদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হচ্ছে,” আসিয়ান চেয়ারম্যানের বিবৃতির খসড়ায় এমনটাই লেখা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ১৯৬৭ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত হওয়ার পর রোহিঙ্গা সংকটকে জোটটির মোকাবিলা সাধন সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। চলতি বছরের জুলাইতে মিয়ানমার রাখাইনে মানবাধিকার লংঘনের নালিশ তদন্তে একটি জিনিস বিক্রয়ের সময়ে মূল্যে ছাড় দেওয়া গঠন করে। স্থানীয় দুই প্রতিনিধি ছাড়াও তাতে ফিলিপাইন ও জাপানের দুই সদস্যও রয়েছেন।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এর আগের অবস্থানে আসিয়ান বাস্তুচ্যুতদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে আনা, মানবিক ত্রাণ সাহায্য এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছিল। চেয়ারম্যানের এবারের বক্তব্যের খসড়ায়ও একই বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, সঙ্গে যুক্ত সাধন হয়েছে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার কথা। জোটের অন্যান্যের তুলনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশি উঠাবসা থাকায় এবং আয়োজক দেশ হওয়ায় সিঙ্গাপুরেরই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের দিকে ঝোঁক রয়েছে বলে সম্মেলন পূর্ববর্তী আলোচনার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানিয়েছে। রাখাইন প্রসঙ্গে জোটের ভিন্ন দেশগুলোও খসড়ার অবস্থানের সঙ্গে একমত কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রয়টার্স বলছে, আসিয়ানের তিন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনেইয়ের অবস্থানও রাখাইন সংকটে জোটের হাতল অবস্থানের পক্ষে। অন্যদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে রয়েছে আঞ্চলিক তিন মিত্র কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনাম; সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক শাসনাধীনে যাওয়া থাইল্যান্ডের অবস্থানও এদিকে।
Leave a Reply